বিক্ষোভ আর বন্দুক প্রদর্শনী পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিতর্ক তুঙ্গে
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত ছাত্রদের সহপাঠী ও স্বজনেরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের দাবিতে আন্দোলন করছে। কিন্তু তার অল্প দূরেই চলমান একটি বন্দুক প্রদর্শনীর দর্শকেরা বলছেন গণহত্যার জন্য আগ্নেয়াস্ত্রকে দায়ী করা ঠিক নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে নাগরিকদের বন্দুক রাখার অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। বুধবার ফ্লোরিডার স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় ১৭ জন নিহত হওয়ার পর এই অধিকারের পক্ষে ও বিপক্ষে বিতর্ক আবার বেগবান হয়।
ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডের বিক্ষোভকারীরা ওই বন্দুক হামলা সম্পর্কে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। ট্রাম্প ও তার সমর্থকেরা মনে করেন মারজরি স্টোনম্যান ডগলাস হাই স্কুলের হামলাকারী নিকোলাস ক্রুজ মানসিক বিকারের কারনে ওই ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়েছে।
কিন্তু, হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ছাত্র ও অভিভাবকেরা মনে করেন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করা হলে বিভিন্ন স্কুলে এমন হামলা বন্ধ করা সম্ভব।
প্রতিবাদ সভায় এমা গঞ্জালেস নামের ছাত্রী বলেন, ‘এটা শুধু মানসিক বিকারের ফল নয়। ওই বন্দুকধারী ছুরি নিয়ে হামলা চালালে এত মানুষকে হত্যা করতে পারত না।’
আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি নিয়ম চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন যা, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বন্ধ করে দেন। গঞ্জালেস ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকদের অধিকার সমর্থনের জন্য ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনেরও (এনআরএ) সমালোচনা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, নিকোলাস ক্রুজ একটি এআর-১৫ অটোমেটিক রাইফেল ও গুলিভর্তি একাধিক ম্যাগজিন নিয়ে স্কুলে হামলা চালিয়েছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, ক্রুজ ফ্লোরিডার একজন বৈধ ডিলারের কাছ থেকে তার রাইফেলটি কিনেছিল।
ফ্লোরিডার এই বিক্ষোভ সভা যখন চলছিল তখন মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে একটি বন্দুক প্রদর্শনী চলছিল। প্রদর্শনীটি বাতিলের দাবি করা হলেও সেখানে পাঁচ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করা হয়।
জো আরিংটন নামের একজন প্রাক্তন পুলিশ সদস্য তার শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে কাঁধে রাইফেল ঝুলিয়ে ওই প্রদর্শনীতে যান। তিনি মনে করেন, বন্দুক ক্রেতাদের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে ভাল করে খোঁজ খবর নেয়া দরকার। কিন্তু, এভাবে পার্কল্যান্ডের স্কুলের ঘটনা এড়ানো যেত না বলে তিনি মনে করেন।
আরিংটন বলেন, ‘কোনও নতুন নিয়ম চালু করেই যা ঘটেছে তা বন্ধ করা যেত না। আমার ধারণা, অনেকগুলো সংস্থা তাদের কর্তব্যে অবহেলা করার কারনে ওই ঘটনা ঘটেছে।’
ক্রুজের সম্পর্কে এফবিআইকে অবহিত করার পরও তাকে সময়মত থামাতে না পারায় গোয়েন্দা সংস্থাটির তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। জানুয়ারির পাঁচ তারিখে এফবিআইকে ফোন করে একজন জানান, ক্রুজ মানুষ হত্যার পরিকল্পনা করছে এবং তার লক্ষ্য হচ্ছে স্কুলের ছাত্রশিক্ষকদের উপর গুলি বর্ষণ করা।
নিউইয়র্ক মেইল/যুক্তরাষ্ট্র/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এইচএম