সন্দেহ বাড়ছে নাইজারের মার্কিন ড্রোন ঘাঁটি নিয়ে
নাইজারে ১১০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মীয়মান গোপন ড্রোন ঘাঁটি নিয়ে নানামুখী সন্দেহ ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মনে। সম্প্রতি বিকল্প ধারার স্বনামধন্য মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্ট ওই ড্রোন ঘাঁটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে ঘাঁটিটিকে ঘিরে নানা রকম প্রশ্ন ওঠে।
ইন্টারসেপ্টে প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্থানীয়দের পরিদর্শনের জন্য ড্রোন ঘাঁটিটি উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সাংবাদিকদের একটি পরিদর্শক দলকে ঘাঁটি পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হলেও সিএনএন ছাড়া আর কোনও সংবাদমাধ্যমকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। জনমনের সন্দেহও দূর করা যায়নি।
ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়, নাইজারের সংবিধান অনুযায়ী এমন ঘাঁটি বৈধতা পেতে পারে কি না। ড্রোন ঘাঁটিটিকে ঘিরে নাইজারে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কার কথা উঠে আসে।
বিশ্লেষণে বলা হয়, ঘাঁটিটিকে ঘিরে সাহারা অঞ্চলে সামরিক উত্তেজনা বাড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী যে ঘাঁটিটির বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের তেমন কোন কিছু জানায়নি তা উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বিমানবন্দরের পাশে ওই ঘাঁটিটি কেন তৈরি হয়েছে তা আগাডেজের মানুষ জানে না এবং ওই ঘাঁটিটির কারণে কি লাভ বা ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়েও তাদের কোনও ধারণা নেই।
ড্রোন ঘাঁটিটিকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে নানামুখী গুঞ্জন রয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে অনেক জল্পনা-কল্পনা ও সমালোচনা। কেউ কেউ মনে করে, ‘সোনা, ইউরেনিয়াম বা তেলের খোঁজে খোঁড়াখুঁড়ি করে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই জঙ্গি ডেকে আনছে।’ কেউ কেউ মনে করে ওখানে যুক্তরাষ্ট্র ‘ভু-গর্ভস্থ জলাধারের খোঁজ পেয়েছে।’ ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদন সেই সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
সন্দেহের অবসানে অবসানে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নাইজারের স্থানীয়দের ঘাঁটিটি পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ইন্টারসেপ্ট জানিয়েছে, ওই ঘাঁটি নিয়ে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে।
যে ছোট দলটি ড্রোন ঘাঁটি পরিদর্শনের জন্য গিয়েছিল তাদের নেতৃত্বে ছিলেন আগাদেজের গভর্নর। দলটিতে ধর্মীয় নেতা, নাগরিক সমাজের সদস্য এবং কয়েকজন সাংবাদিক ছিলেন। স্থানীয় রেডিও চ্যানেল স্টুডিও কালানগো বলেছে, ‘ঘাঁটিটির ভেতরের কার্যক্রম নিয়ে জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটাতে’ এই পরিদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে।
আগাদেজের সংবাদমাধ্যম এয়ার-ইনফো বলেছে, আমন্ত্রিতদের ঘাঁটিতে থাকা নির্মীয়মান রানওয়ে, নাইজার ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমান রাখার জন্য নির্ধারিত হ্যাঙার এবং নির্মাণকাজে জড়িত সেনাদের থাকার জায়গা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। ঘাঁটিটির এ বছরেই উদ্বোধন হওয়ার কথা। এই ঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে নাইজার, লিবিয়া, চাঁদ ও মালিসহ সাহারার বিশাল এলাকা জুড়ে অভিযানের উদ্দেশে উড়াল দিতে পারবে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন।
এয়ার-ইনফো জানিয়েছে, পরিদর্শক দলের কাছে আগাদেজের স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশে ওই ঘাঁটিটির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। বিমানবাহিনীর লেফটেনেন্ট কর্নেল ব্র্যাড হার্বফ সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয় উৎস থেকে ১৩ মিলিয়ন ডলারের নুড়ি পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণ উপকরণ কিনেছে। অবশ্য, ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছিল, স্থানীয় শ্রমিকদের যারা ঘাঁটি নির্মাণে কাজ করছে তাদের মজুরি প্রতি ঘন্টায় ১.২০ ডলার।
এয়ার-ইনফো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ওখানে কোনও খনি খনন করছে না জানিয়ে লেফটেনেন্ট কর্নেল ব্র্যাড হার্বফ পরিদর্শনে যাওয়া স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আপনারা নিজের চোখেই তো সব দেখেছেন।’ আগাদেজের গভর্নর সাদৌ সোলোকে পরিদর্শকদের বলেছেন, ‘এই স্থাপনাটি আমাদের জন্য দরকারি।’ রেডিও চ্যানেল স্টুডিও কালানগো প্রচার করেছে এ খবর। তবে এতো কিছুর পরও সন্দেহের অবসান হয়নি। এয়ার- ইনফো ফেসবুকে তাদের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করলে সেখানে পাঠকরা যেসব মন্তব্য করেছেন সেগুলোর বেশিরভাগই সন্দেহ প্রকাশ করে লেখা।
ইব্রাহিম ইল্লো নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘তারা তা-ই দেখিয়েছে, যা তারা দেখাতে চায়।’ ইসোফ ইউসুফ লিখেছেন, ‘চলে যাও, আমাদের নিরাপত্তার দরকার নেই।’ আর একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন, ‘তারা নাইজারের শেষ বিন্দুটুকুও শুষে নেবে।’
ড্রোন ঘাঁটিটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, আগাদেজে উপস্থিত ইতালীয় সাংবাদিকদের ঘাঁটিটিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাদেরকে বলা হয়েছে, এই পরিদর্শনের সুযোগ নাইজারের নাগরিকদের জন্য নির্ধারিত। আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান তত্ত্বাবধানকারী ‘আফ্রিকা কমান্ড’ গত মাসে দ্যা ইন্টারসেপ্টের আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছিল।
২০১৬ সালে ঘাঁটিটির নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে শুধু সিএনএনকেই ঘাঁটির ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেতে দেখা গেছে। ইমেইলে পরিদর্শনের বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হলে, আফ্রিকম দ্যা ইন্টারসেপ্টকে কোন উত্তর দেয়নি।
নিউইয়র্ক মেইল/যুক্তরাষ্ট্র/১ মার্চ ২০১৮/এইচএম