রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী ট্রাম্প!
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ‘খুবই উদ্বিগ্ন’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট পরিস্থিতির উত্তরণে সাহায্য করতে আগ্রহী। তিনি এ বিষয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টির সমাধানে ভারত ও সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, ‘এই সংকটে আমি চীনের অসহযোগিতামূলক আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশিদের হতাশার কথা শুনেছি। চীনের আচরণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের উদার মানবিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে তারা অবশ্যই বৈপরিত্য দেখতে পাচ্ছে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপসহকারী লিসা কার্টিস একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ সফরে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যাপক আলাপ আলোচনা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
তার ভাষায়, ‘আমরা মনে করি এই পরিস্থিতি উত্তরণে ভারতেরও আগ্রহ রয়েছে।’
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাহিদা পূরণের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের সঙ্গে কাজ করার উপায় খুঁজছে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবর্তনের বার্মার ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য একসঙ্গে কাজ করার উপায় খুঁজছে।
তিনি বলেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সমমনা অংশীদার। বার্মার সঙ্গে আমরা কূটনৈতিক উপায়ে সমন্বয় সাধন করতে পারি। আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন দিচ্ছি। এটা নিশ্চিত করছি যে, এই অবস্থা যেন তাদের নিজস্ব আর্থ সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মৌলবাদের মতো বিষয়গুলোকে আরও জটিল করে না তোলে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই যৌথ স্বার্থ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে চীনের দিক থেকে কোনও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, নির্দিষ্ট এই ইস্যুতে চীনের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।
এ মাসের গোড়ার দিকে ঢাকা সফরে ট্রাম্প প্রশাসনের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা লিসা কার্টিস রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ওপর জোর দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী’র সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে। এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীরতায় নিয়ে যেতে আগ্রহী।
সফরকালে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং, বালুখালী ও টেকনাফ উপজেলার শামলাপুরের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন লিসা কার্টিস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি অব্যাহত রাখা, অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার মতো বিষয়গুলো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এরইমধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশের ওপর রয়েছে। তবে এখানে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রোহিঙ্গা সংকট নিয়েই এখন ব্যাপক চাপে রয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় আমরা বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাংলাদেশ যদি তার সীমান্ত খুলে না দিতো তাহলে এই লাখ লাখ মানুষের ভাগ্যে কী ঘটতো?
এদিকে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি রাখাইনে বৌদ্ধদের মডেল গ্রাম গড়ে তুলছে বর্মি কর্তৃপক্ষ। বুলডোজার চালিয়ে সেখানে ধ্বংস করা হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। স্থানে স্থানে স্থাপিত হচ্ছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট। মিয়ানমারের দাবি, চলমান প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যেসব রোহিঙ্গা রাখাইনে ফিরবেন, তাদের জন্যই পুড়ে যাওয়া গ্রামগুলোতে সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। তবে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুলডোজারে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বের স্মৃতি মুছে দিয়ে বিপুল সামরিকায়িত রাখাইনে এখন বৌদ্ধদের জন্য মডেল গ্রাম নির্মাণ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে, রাখাইন-বৌদ্ধদের অর্থায়ানে পরিচালিত সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে রোহিঙ্গাশূন্য রাখাইন গড়ে তোলার প্রকল্প।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে এবং তাদের নিজ দেশে ফেরার সব পথ বন্ধ করে দিতেই রাখাইনে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে বর্মি সামরিক বাহিনী। সেখানে সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের ভয়বহতায় জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। এর মধ্যেই রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালিয়ে গণহত্যার আলামত নষ্ট করছে সেনাবাহিনী। করা হচ্ছে বিপুল সামরিকায়ন। গড়ে তোলা হচ্ছে বৌদ্ধদের মডেল গ্রাম। বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দাবি জানালেও উল্টো পথে হাঁটছে মিয়ানমার।