মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এশিয়রা কৌশলগত বর্ণবাদের শিকার!
১৯৫০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ ছিলো অ্যাংলো স্যাক্সনদের হাতে। কিন্তু এরপর থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যেতে থাকে। দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে মার্কিন মুলুকে ঢল নামে এশিয় অভিবাসীদের। ধীরে ধীরে প্রভাব কমতে থাকে নিজেদের চর্মবর্ণে গর্বিত অ্যাংলো স্যাক্সনদের। নিজ যোগ্যতায় অবস্থান শক্ত করতে থাকেন এশিয়রা।
মার্কিন শিক্ষিত ব্যক্তিরা এখন বর্ণবাদকে ঘৃণা করার দাবী করেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ভূখন্ডে আসলেই কি কমেছে বর্ণবাদ? নাকি তা এক নতুন চেহারা পেয়েছে। সিএনএন মানির সম্পাদক ফরিদ জাকারিয়ার অনুষ্ঠান ‘ফরিদ জাকারিয়া জিপিএস’ এ এই সম্পর্কে উঠে এসেছে ভয়াবহ সব তথ্য!
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বাণিজ্যিক নগরী নিউইয়র্কে ৬টি বিশেষ স্কুল আছে। যা সাধারণ স্কুল নয়। এখানে সাধারণ স্কুলের চাইতে লেখাপড়ার মান উন্নত। তাই বাবা মায়েরা সন্তানদের এখানে পড়াতে আগ্রহী হন স্বাভাবিকভাবেই। এই স্কুলগুলিতে চাইলেই ভর্তি হওয়া যায়না। রীতিমত ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পেতে হয় স্কুলগুলোয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ শুধু মেধার ভিত্তিকেই শিক্ষার্থী বাছাই করার সুযোগ পান।
এই স্কুলগলোতে কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীর সংখ্য অতি নগণ্য। মাত্র ৪ শতাংশ। পক্ষান্তরে নিউইয়র্কের সাধারণ স্কুলগুলোতে কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮ শতাংশ! বিশেষ স্কুলে হিস্পানিক শিক্ষার্থী মাত্র ৬ শতাংশ হলেও সাধারণ স্কুলে তা ৪০ শতাংশ। আর সাধারণ স্কুলে এশিয়ান শিশুদের সংখ্যা ১৬ শতাংশ হলেও বিশেষ স্কুলগুলোতে তা ৬২ শতাংশ! এই শিক্ষার্থীরা কোন বিশেষ সুবিধায় এই স্কুলগুলোতে ভর্তি হননি। তারা শুধুমাত্র মেধার জোরেই এই ৮টি স্কুলে পড়েন।
এশিয়রা সংখ্যাগরিষ্ট হওয়ায় নিউইয়র্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ এই স্কুলগুলো সম্পর্কে এক অদ্ভূত অভিযোগ করেছেন! স্কুলগুলোতে নাকি বৈচিত্রের অভাব। তবে কথাটি অমূলক। কারণ বর্ণান্ধ মার্কিনিরা এশিয়দের শুধুই এশিয় হিসেবেই দেখে থাকেন। কিন্তু এশিয়দের মধ্যে আছেন চীনা, আছেন জাপানি, কোরিয়, ভারতীয়, ফিলিপিনো, বাংলাদেশী, ভিয়েতনামী কিংবা ইন্দোনেশিয়রা। যাদের আচরণ আলাদা, সংস্কৃতি আলাদা, ভাষা আলাদা। এবং নিসঃন্দেহে এখানে বৈচিত্রের কোনই অভাব নেই। সুতরাং ব্লুমবার্গের মন্তব্য নিখাদ বর্ণবাদী আচরণ ব্যতিত আর কিছুই নয়!
আরো ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে প্রিস্টন বিশ্ববিদ্যালয় এর একটি গবেষণায়। নিউইয়র্কের এই বিশেষ স্কুলগুলোতে এশিয়ানদের আনাগোনা বাড়ছে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে এশিয়ান ঠেকানোর ব্যবস্থা! এর মধ্যে রয়েছে হাভার্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ও। তারা মুখে বলছে, তারা শুধুই মেধার মূল্যায়ন করে থাকে। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পছন্দের বিষয়ে পড়তে দিতে হয় ব্যক্তিত্বের পরীক্ষা। যেই পরীক্ষার কোন স্বীকৃত পদ্ধতি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বলে দিচ্ছে কার ব্যক্তিত্ব কতটা সবল বা দূর্বল।
আর এভাবেই বলা যাচ্ছে এশিয়দের ব্যক্তিত্ব ককেশীয় বা অ্যাংলো স্যাক্সনেেদর তুলনায় দূর্বলতর! এই পদ্ধতিটির জন্মই হয়েছিলো বর্ণবাদ থেকে। ১৯২০ এর দশকে সারা বিশ্ব থেকে ইহুদিরা আসতে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের ঠেকাতেই এই বিকৃত পদ্ধতির আশ্রয় নেয় যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো!
কথায় আছে, প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার। মুখে প্রগতির বুলি কপচালেও এখনও মনের মধ্যে মার্কিনিরা লালন করে চলেছেন নোংরা বর্ণবাদ। সাধারণ মানুষ তো দূর, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন বর্ণবাদের অতলে পড়ে থাকে তখন আর বলার কিছুই থাকেনা।