নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা : ‘বিচারপতি সিনহার বই কারা লিখিয়েছে আমি জানি’
বিশেষ প্রতিনিধি, নিউইয়র্ক: সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার আত্মজীবনী প্রকাশের পেছনে কারা রয়েছে তা খুঁজে বের করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি এ ব্যাপারে জানি, কিন্তু আমি বলবো না। এর পেছনে কারা রয়েছে তা খুঁজে বের করার জন্য সাংবাদিকদের আহবান জানান তিনি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩ তম অধিবেশন যোগদান শেষে নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহার একটি আত্মজীবনী সম্প্রতি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। এতে বিচারপতি সিনহা তার পদত্যাগের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
বইটি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এই বইয়ের পাণ্ডলিপি কতবার বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে আনা হয় তা সাংবাদিকদের খুঁজে বের করতে হবে। এই বই প্রকাশনায় কারা অর্থ দিয়েছে এবং আপনাদের মতো কোন সংবাদপত্রের সাংবাদিক এর সঙ্গে জড়িত কিনা এবং কি পরিমাণ অর্থ দিয়েছে তা অনুগ্রহ করে উন্মোচন করুন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন বড় আইনজীবী এই বইয়ের পান্ডুলিপি সংশোধন করে দিয়েছেন কিনা অথবা কোন সংবাদপত্র অথবা এর মালিক এর পৃষ্ঠপোষক কিনা তা আপনারা খুঁজে বের করুন।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ সময় মঞ্চে ছিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ-বিন-মোমেন সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সিনহার ভাইয়ের নামে একটি বাড়ি ক্রয় সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে বাড়ি কেনা কঠিন কিছু নয়। বিপুল দামের কারণে বাংলাদেশে কেনা কঠিন। অর্থ জমা করলে যুক্তরাষ্ট্রে যে কোন ব্যক্তি বাড়ি কিনতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কে এবং কিভাবে এই বাড়ি ক্রয় করেছে সে ব্যাপারে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। আপনারা খুঁজে বের করুন এবং তথ্য দিন। যদি কোন ব্যক্তি এ ব্যাপারে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনের সময় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা হতে পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিরোধী দলীয় নেত্রীর (রওশন এরশাদ) সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। তারা যদি চান আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন।
তিনি বলেন, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল রাজনৈতিক দল যদি চায় তাহলে আমরা তাদের প্রতিনিধি নিয়ে সরকার গঠন করতে পারি। তারা ক্ষমতাসীন অথবা বিরোধী দল কিনা সেটা কোন বিষয় না। তবে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে এখানে কোন সংজ্ঞা নেই।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশন অংশ নেওয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। যারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশ সাধ্যমতো তাঁদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও শিশুদের যত্নের ব্যবস্থা করেছে। যেহেতু রোহিঙ্গা সমস্যার উদ্ভব হয়েছে মিয়ানমারে, তাই তার সমাধানও মিয়ানমারে হতে হবে। এটাই আমি বলেছি সাধারণ পরিষদে রাখা বক্তব্যে।
রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘের চুক্তি অবিলম্বে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছি এবং জাতিসংঘকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।