মধ্যবর্তী নির্বাচনে আগাম ভোটের রেকর্ড, তারুণ্যের জোয়ার
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে এবার রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট পড়েছে। এ ভোটে দেখা গেছে তারুণ্যের জোয়ার। তাই এবারের ভোটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি- দুই দলের ভাগ্য নির্ধারণে নারীর পাশাপাশি তরুণ সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার ভোট শুরু হয়। দিনের শুরুতে বিভিন্ন রাজ্যের ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের লম্বা লাইন দেখা যায়। এখন কেবল ফলের অপেক্ষা। ভোট-পূর্ব জরিপে দেখা গেছে, অভিবাসন, স্বাস্থ্যনীতি, জাতিবিদ্বেষসহ বিভিন্ন ইস্যুতে উদ্বিগ্ন দেশটির তরুণ প্রজন্ম। এসব কারণে তরুণ ভোটারের বেশিরভাগই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধী। ফলে মধ্যবর্তী নির্বাচনকে ট্রাম্পের জন্য এক মহাপরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডাভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রকল্পের একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার তিন কোটি ৪৩ লাখ আগাম ভোট পড়েছে। প্রায় একই তথ্য জানিয়েছে এনবিসি নিউজ ডাটা অ্যানালিটিকস ল্যাব। এ প্রতিষ্ঠানের হিসাবে সাড়ে তিন কোটির বেশি আগাম ভোট পড়েছে। ২০১৪ সালে পড়েছিল মাত্র দুই কোটি ৭৫ লাখ। এ হিসাবে আগাম ভোট এবার ৬৮ থেকে ৭৫ লাখ বেশি পড়েছে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে সাধারণত বয়স্ক ভোটারের আধিপত্য থাকে। ২০১৪ সালের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, এবার আগাম ভোট ও বিদেশ থেকে যারা ভোট দেন, তাদের মধ্যে ১৮-২৯ বছরের তরুণ ভোটারের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্য অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ইলিনয়, নেভাদা ও টেক্সাসে তরুণরা এবার লক্ষ্যযোগ্যভাবে সাড়া দিয়েছেন। ২০১৪ সালের তুলনায় ইলিনয় রাজ্যে এবার তরুণদের আগাম ভোটের হার ১৪৪ শতাংশ বেড়েছে। তরুণদের বেশির ভাগই ট্রাম্পবিরোধী। তাই আগাম ভোটের নতুন রেকর্ড ডেমোক্র্যাটদের জন্য আশাজাগানিয়া।
ভোটের সপ্তাহখানেক আগে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অব পলিটিকসের এক জরিপে দেখা যায়, ৪০ শতাংশ তরুণই এবার ভোট দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। ডেমোক্র্যাট সমর্থক তরুণদের ৫৪ শতাংশ জানিয়েছিল, তাদের ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। আর রিপাবলিকান সমর্থক তরুণদের মাত্র ৪৩ শতাংশ একই মাত্রার আগ্রহের কথা জানায়।
বিশ্নেষকরা আগেই অনুমান করছিলেন, এবার ভোটের হার বেশি হতে পারে। এর একটি বড় কারণ অভিবাসন এবং স্বাস্থ্য কর্মসূচি ইস্যুতে ভোটাররা অনেক বেশি শঙ্কিত। অন্যদিকে, ভোটদানে আগ্রহ বাড়াতে প্রচার চালিয়েছে ওয়ালমার্ট, লেভিস্ট্রস ও পেপালের মতো বড় দেড়শ' কোম্পানি। গতকাল মঙ্গলবার ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত হন, রাইড শেয়ারিং কোম্পানি লিফট এবং উবার কম মূল্যে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যায়।
ভোটের আগে সিএনএনের সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী, ডেমোক্রেটিক পার্টি বেশ কিছুটা এগিয়ে আছে। জরিপে এ পার্টির পক্ষে ৫৫ শতাংশ ও রিপাবলিকান পার্টির পক্ষে ৪২ শতাংশ সমর্থন রয়েছে। জরিপে ডেমোক্র্যাটদের এগিয়ে থাকার প্রধান কারণ নারী ভোটার। জরিপে অংশ নেওয়া ৬২ শতাংশ নারী ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ও ৩৫ শতাংশ রিপাবলিকানদের পক্ষে মত দেন।
এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মরিয়া হয়ে প্রচার চালিয়েছেন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চকক্ষ সিনেটে নিজের দল রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ অর্জনে প্রয়োজনীয় আসনে জয় নিশ্চিত করতে। এর সবচেয়ে বড় কারণ, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদের বাকি দুই বছরে নিজের চলার পথ নির্বিঘ্ন করতে চান। প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে নিয়ন্ত্রণ না থাকলে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে ব্যাপক বাধার মুখে পড়বেন। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা এ মধ্যবর্তী নির্বাচনকে ট্রাম্পের জন্য মহা পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন। আর রিপাবলিকানরা উচ্চকক্ষ সিনেটে তাদের আধিপত্য আগের চেয়ে বাড়ানোর চেষ্টা চালান। অবশ্য ভোট-পূর্ব জরিপের ফলগুলো ডেমোক্র্যাটদের ভালো ফল করার আভাস দিচ্ছে। তবে ট্রাম্পের আমলে দেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো হওয়ায় ডেমোক্র্যাটরা শেষ পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে অনেকের সংশয়ও রয়েছে। আরেকটি আশঙ্কা, এবার সিনেটের যেসব আসনে নির্বাচন হচ্ছে, তার বেশিরভাগই ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ফলে ডেমোক্র্যাটরা কেউ পরাজিত হলে তা উল্টো ট্রাম্পকেই সুবিধা করে দেবে।
ভোটের আগে থেকে বলা হচ্ছিল, প্রতিনিধি পরিষদে নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের হাতে থাকছে কি-না, তা অনেকটাই এবার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ফলের ওপর নির্ভর করছে। আর সিনেটে নিয়ন্ত্রণ পেতে অ্যারিজোনা ও নেভাদায় ডেমোক্র্যাটদের জিততে হবে; কিন্তু নর্থ ডাকোটা ও মিসৌরিতে তাদের হারার আশঙ্কা আছে। গতকাল সিনেটর ও প্রতিনিধি পরিষদ প্রার্থীর ভাগ্যনির্ধারণী ভোট হয়ে গেছে। ভোটের ফলে কী আসে, এখন চলছে সেই অপেক্ষা।