বিপাকে ট্রাম্প : হাউসে ডেমোক্র্যাট, সিনেটে রিপাবলিকানদের জয়
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে দেশটির সংসদ কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে জয় পেয়েছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। এ ফল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা।
গত আট বছরের মধ্যে এবার প্রথম হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলো ডেমোক্র্যাটরা। এর ফলে এখন ডেমোক্র্যাটরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নানা এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবেন।
তবে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সময় সকাল থেকে দেশজুড়ে ভোট দিতে শুরু করেন সে দেশের নাগরিকরা। শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। এরপর আসতে শুরু করে নির্বাচনী ফলাফল।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চার বছর পরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। আর প্রেসিডেন্টের মেয়াদের মাঝামাঝিতে অর্থাৎ, দু’বছরের মাথায় হয় মধ্যবর্তী নির্বাচন। এ নির্বাচনে জনগণ প্রেসিডেন্টকে নিয়ে তাদের সন্তোষ বা অসন্তোষ প্রকাশের সুযোগ পায়। আর তাই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে মানুষ কি ভাবছে এবং তার আবারো ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা কতটুকু তা এ নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
সাধারণত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম থাকে। তবে এবার রেকর্ড পরিমাণ ভোটার ভোট দেন। ভোটে কংগ্রেসের দুই কক্ষের মধ্যে একটি কক্ষ রিপাবলিকান আর অপরটি ডেমোক্র্যাটদের দখলে যাওয়ায় বিল পাস করাতে বেশ বেগ পেতে হবে ট্রাম্পকে।
মঙ্গলবারের ভোটের মাধ্যমে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এর সব কয়টি (৪৩৫) আসনের প্রতিনিধি নির্বাচন করছেন ভোটাররা। এ ছাড়া, উচ্চকক্ষ অর্থাৎ সিনেটের একশ’ আসনের মধ্যে ভোট গ্রহণ করা হয় ৩৫টির। আর ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৩৬টির গভর্নর নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ভোটাররা। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি অঞ্চলের গভর্নর নির্বাচন করা হবে। এর বাইরে অনেক নগরীর মেয়র এবং স্থানীয় কর্মকর্তাও নির্বাচিত হবেন এ ভোটের মাধ্যমে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসি'র সহযোগী নেটওয়ার্ক সিবিএস'এর হিসাব অনুযায়ী, কংগ্রেসের নিম্নতর কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২৩টি আসনে জয় পাবে ডেমোক্র্যাটরা। মঙ্গলবার হাউজের ৪৩৫টি আসনের সবকটিতেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ভোট।
এখন ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের প্রশাসনিক এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করতে পারবে। প্রেসিডেন্টের আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত পরিকল্পনাতেও বাধা দিতে পারবে ডেমোক্র্যাটরা।
নিউ ইয়র্কের ডেমোক্র্যাট আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ কংগ্রেসে সর্বকনিষ্ঠ নারী হিসেবে যোগদান করে ইতিহাস তৈরি করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মিনেসাটা এবং মিশিগান রাজ্যের দুই ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদও হয়েছেন ইতিহাসের অংশ। ইলহান ওমর এবং রাশিদা তালাইব মার্কিন কংগ্রেসে প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ইলহান ওমর সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে ঠাঁই নিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি প্রথম সোমালি-আমেরিকান হিসেবে সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন।অন্যজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক।
প্রথম স্থানীয় অ্যামেরিকান নাগরিক হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হয়েছেন ক্যানসাস রাজ্যের শারিস ডেভিডস এবং নিউ মেক্সিকো রাজ্যের ডেব্রা হালান্ড। ক্যানসাস থেকে নির্বাচিত হয়েছেন প্রথম সমকামী কংগ্রেস প্রতিনিধি ডেভিডস।
কংগ্রেসের ঊর্ধ্বতন কক্ষে সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখলেও সেখানে তাদের অবস্থান খুব একটা শক্ত নয়। ১শ আসনের সিনেটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে যথাক্রমে ৫১ ও ৪৯টি আসন।
তবে সিনেট নির্বাচনে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল রিপাবলিকানরা। এবারের সিনেট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের লড়াই করতে হয়েছে ২৬টি আসনের জন্য। সেখানে রিপাবলিকানরা লড়াই করেছে মাত্র ৯টি আসনে।
সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাহী এবং বিচারিক ক্ষমতা ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ পাবেন। তবে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইন প্রণয়ন বিষয়ক যে কোনো প্রস্তাবে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকবে তাদের হাতে।