পানি ও পয়নিষ্কাশন লাগবে না এমন টয়লেট উন্মোচন করলেন বিল গেটস
যুক্তরাষ্ট্রের মানব-হিতৈষী বিলিয়নিয়ার বিল গেটস নতুন এক ধরনের টয়লেট উন্মোচন করেছেন। এই টয়লেটে কোনও পানি ব্যবহার করতে হবে না এবং থাকবে না কোনও ময়লা সংরক্ষণাগারও। অত্যাধুনিক এই টয়লেট বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে মানব বর্জ্যকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সারে রূপান্তরিত করবে।
মঙ্গলবার বেইজিংয়ে নতুন ধরনের টয়লেট উন্মোচন করেন বিল গেটস। এর একদিন আগে সাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত বিশাল এক বাণিজ্য সম্পর্কিত ইভেন্টে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। বিল গেটস বৈশ্বিক এবং মুক্ত বাণিজ্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি মনে করেন, টয়লেট প্রযুক্তিকে সম্ভব করেছে বৈশ্বিক এই বাণিজ্য ব্যবস্থা।
বেইজিং ইভেন্টে বক্তৃতা দেয়ার সময় মানব বর্জ্যে পূর্ণ স্বচ্ছ একটি পাত্র হাতে নিয়ে স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের গুরুত্ব বর্ণনা করেন বিল গেটস। এ সময় তিনি বলেন, এটা মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে এখানে (মল ভর্তি পাত্র) ২০০ ট্রিলিয়ন রোটা ভাইরাস, ২০ বিলিয়ন শিগেল্লা ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী কীটের ১ লাখ ডিম থাকতে পারে।
এ সময় গেটস বলেন, আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, বাণিজ্য প্রতিটা দেশকে করতে উৎসাহিত করে, যেটা তারা ভালো পারে। চীন, থাইল্যান্ড কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হওয়া টয়লেটের উপাদান সম্পর্কে যখন আমি কথা বলবো তখন আপনি অবশ্যই সবগুলোর সমন্বয়ে একটা কিছু চাইবেন।
নতুন ধরনের এই টয়লেটের বেশ কয়েকটি ধরন রয়েছে। সবগুলোই তরল এবং কঠিন বর্জ্যকে আলাদা করার মাধ্যমে কাজ করে। বর্তমান টয়লেটে বর্জ্য সরে যায় পানির মাধ্যমে এবং সেটা কোনও এক নর্দমায় বা সংরক্ষণাগারে জমা হয়। কিন্তু নতুন প্রযুক্তির টয়লেটে এ ধরনের কোনও সংরক্ষণাগার নেই।
কিছুদিন আগে গেটস জানিয়েছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করা নতুন প্রযুক্তির টয়লেট বিক্রির জন্য প্রস্তুত। এই ধরনের টয়লেট তৈরির ধারণা এসেছে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণা প্রকল্প থেকে। বিল ও মেলিন্ডা গেটস পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানব-হিতৈষী সংস্থা।
তিনি প্রথাগত টয়লেটের সাথে পানিবিহীন টয়লেটের তুলনা বোঝাতে কম্পিউটারের প্রসঙ্গ টেনেছেন। তিনি মনে করেন, ১৯৭০ এর দশকের কম্পিউটারের চেয়ে বর্তমান কম্পিউটারের যে উন্নতি তার সাথে টয়লেটের উন্নতির মিল রয়েছে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, যে পদ্ধতিতে বিশাল আকারের কম্পিউটার ব্যক্তিগত স্বয়ংসম্পূর্ণ ডিভাইসে রূপান্তরিত হয়েছে তেমনি এই রাসায়নিক প্রক্রিয়াকেও আমরা সাধারণ স্তরে নিয়ে আসতে সক্ষম হবো।
বিল ও মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, অস্বাস্থ্যকর পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মারা যায় ৫ লাখ। এছাড়া এই সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা করতে ও রোগের কারণে আয় করতে না পারায় প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ২০০ ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়।
টয়লেট প্রকল্পে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল গেটস ফাউন্ডেশন এবং বড় পরিসরে বিতরণের আগে সংস্থাটি একই পরিমাণ অর্থ আবারও ব্যয় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ সম্পর্কে গেটস বলেন, মানুষ যেহেতু এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে এ কারণে চলতি বছর ১০০টির মতো এই প্রযুক্তির টয়লেট নিয়ে আসা হবে।
এই প্রথম চীনে কোনও ইভেন্টে এলো গেটস ফাউন্ডেশন যেখানে তিন বছর মেয়াদী ‘টয়লেট বিপ্লব’ হাতে নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। পর্যটন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ২০২০ সালের মধ্যে ৬৪ হাজার পাবলিক টয়লেট উন্নয়নের কাজ করবে চীন। বিল গেটস আশা করছেন ২০৩০ সালের মধ্যে টয়লেট বাজার ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে।
প্রসঙ্গত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্কের উত্তেজনার মধ্যেই চীন সফরে এসেছেন বিল গেটস। অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি দেশ কখনওই একে-অপরকে ছাড় দেয় না।