অবশেষে শাটডাউন নিরসনে সাময়িক চুক্তিতে ট্রাম্প
মেইল রিপোর্ট: অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড ৩৫ দিনের সরকারি অচলাবস্থার পর সাময়িকভাবে শাটডাউন নিরসনে চুক্তিতে পৌঁছালেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে ৩ সপ্তাহের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থ-বরাদ্দের বিলে সই করেন প্রেসিডেন্ট। তবে কংগ্রেস যথাযথ চুক্তিতে না পৌঁছালে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকার আবারও অচলাবস্থায় পড়বে বলেও হুঁশিয়ারি দেন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ না পেলেও কেন্দ্রীয় সরকার সাময়িকভাবে চালু করতে এ চুক্তি করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ শাটডাউনের আপাতত অবসান হলো।
গতকাল শুক্রবার ট্রাম্প আগামী ২১ দিনের জন্য সরকার চালু করার বিলে সম্মতি দেন। হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে দুপুরে দেওয়া ভাষণে সমঝোতার কথা ঘোষণা দেন তিনি। সন্ধ্যায় সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ পরিকল্পনাটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
সমঝোতার ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, ‘শক্তিশালী দেয়াল বা স্টিলের ব্যারিয়ার নির্মাণের বাইরে সত্যিই আমাদের আর কোনো উপায় নেই। কংগ্রেস যদি কোনো যথাযথ চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারে তাহলে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকার আবারও অচলাবস্থায় পড়বে। অথবা আমি এই জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করব।’
তিনি আরও বলেন, চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি কার্যক্রমে অর্থায়ন নিশ্চিত হয়েছে। তারা পূর্ণ মজুরি পাবেন।’
এসময় তিনি ‘রাজনৈতিক জটিলতায়’ যেসব সরকারি কর্মচারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ‘অভাবনীয় দেশপ্রেমিক’ আখ্যা দেন।
শুক্রবার মধ্যরাতে ট্রাম্প বিলটিতে স্বাক্ষর করেন। এতে করে ৮ লাখ সরকারি কর্মীর উদ্বেগের অবসান হলো। শাটডাউনের সময় বেতন না পাওয়া এসব কর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে।
গত বছর ২২ ডিসেম্বর থেকে সরকারি বাজেটের অভাবে ৯টি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আংশিক অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে। যার ফলে বেতন ছাড়া কাজ করতে বাধ্য হন ৮ লাখের বেশি সরকারি চাকরিজীবী।
এই চুক্তি অনুসারে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার চালু থাকবে। এর মধ্যে সর্বদলীয় একটি কমিটি গঠন করা হবে যারা সীমান্ত সুরক্ষার জন্য ব্যয় নিরূপণের জন্য।
এদিকে, শাটডাউনের সাময়িক অবসানের এ চুক্তি ডেমোক্র্যাটিক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির এটা বড় জয়। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর মাত্র তিন সপ্তাহ আগে স্পিকারের দায়িত্ব নেন তিনি।
মার্কিন অর্থবছর শুরু হয় ১ অক্টোবর। তার আগেই বাজেট অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও সমঝোতার অভাবে কখনও কখনও মার্কিন কংগ্রেস তা পাস করাতে ব্যর্থ হয়। এমন অবস্থায় অস্থায়ী বাজেট বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সরকার পরিচালনার তহবিল জোগান দেওয়া হয়। অস্থায়ী এই বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুই কক্ষের অনুমোদনসহ প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের তিন চতুর্থাংশ কার্যক্রম পরিচালনার অর্থ বরাদ্দ করা আছে। বাকি এক চতুর্থাংশের বাজেট ফুরিয়ে যাওয়ায় অচলাবস্থা ঠেকাতে গত ২১ ডিসেম্বর নতুন অস্থায়ী বাজেট বরাদ্দ ছিল অপরিহার্য। তবে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বরাদ্দ প্রশ্নে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় সৃষ্টি হয় ‘অচলাবস্থা’। বরাদ্দ কম পড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ১৫টি কেন্দ্রীয় দফতরের মধ্যে ৯টিতে তখন থেকে আংশিক শাটডাউন শুরু হয়। এর ফলে লাখ লাখ সরকারি কর্মচারি বেতন ছাড়া কাজ বা বাধ্যতামূলক ছুটিতে যেতে বাধ্য হয়।
দেয়াল নির্মাণে অর্থায়নের জন্য ট্রাম্প অনড় অবস্থানে থাকার ফলে দেশটির সরকার ব্যবস্থা বিভক্ত হয়ে পড়ে। হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসের দূরত্ব বাড়ে। এই টানাপড়েনে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম শাটডাউন ৩৫ দিনে গড়ায়।