বিশ্বনেতাদের প্রতি স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে শেখ হাসিনার আহ্বান
তুহিন সানজিদ: জাতিসংঘের ৭৪ তম অধিবেশনে স্বাস্থ্য বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এই সভার কো-চেয়ার হিসেবে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালনের শুরুর বক্তব্যে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
এসময় স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের নেয়া পরিকল্পনার কথা বিশ্ববাসীকে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে দেয়া অর্থ সত্যিকারের গরিব মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। যেন সেই অর্থ ধনীদের আরও ধনী করতে না খরচ হয়।
বৈঠকে স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের প্রথমাংশের মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন। বৈঠকে স্বাস্থ্য সেবায় বাংলাদেশের অর্জনকে সাধুবাদ জানান সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা।
এছাড়া সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য পূরণ করতে এবং অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বর্ণ, ধর্ম, রাজনৈতিক বিশ্বাস, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবেচনা ছাড়াই সুস্বাস্থ্য উপভোগ করা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। সবার জন্য উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি দু’টি বিষয়কে বোঝায়। প্রথমত, সামাজিক অবস্থা বিবেচনা ছাড়াই প্রত্যেকে অবশ্যই সমান সুবিধা ভোগ করবে। দ্বিতীয়ত, সম্পদ ও লাভে প্রত্যেকের সমান ও সাধারণ প্রবেশাধিকার থাকবে।
তিনি বলেন, সম্পদের সুষম বণ্টন ও প্রবেশাধিকার ছাড়া শুধু প্রবৃদ্ধি অর্জন যথেষ্ট নয়। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত সার্বজনীন স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, ২০৩০ এজেন্ডা গ্রহণের সময় আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সব মানুষ এবং সম্প্রদায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবে এবং কেউ এ সুবিধা থেকে বাদ পড়বে না। যদিও কিছু বড় অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু বিশ্বের অর্ধেক মানুষ এখনো প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। কেবল স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের কারণে প্রতিবছর ১শ’ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যে ঢুকতে বাধ্য হচ্ছে। ৮শ’ মিলিয়ন মানুষ তাদের ব্যয়ের কমপক্ষে ১০ শতাংশ খরচ করছে স্বাস্থ্যসেবার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিব লোকজন সাধারণত বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সেবা নিতে পারে না। ফলে তাদের জীবন-জীবিকা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে। সমাজের দরিদ্র মানুষের সাশ্রয়ী ও কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা দেয়া মাধ্যমে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যসেবার সমতা আনা যেতে পারে।
গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করার কথা উল্লেখ করেন।