রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যৌথ কার্যনির্বাহী ব্যবস্থা গঠনে সম্মত চীন
তুহিন সানজিদ: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রকৃত পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য একটি ‘যৌথ কার্যনির্বাহী ব্যবস্থা’ গঠনে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমার।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে একটি যৌথ বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানান, বাংলাদেশ, চীন এবং মিয়ানমার যৌথভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিস্থিতির মূল্যায়ন করবে। কিছু আপত্তি থাকা সত্ত্বেও চীনের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। অক্টোবরে ত্রিপক্ষীয় কার্যনির্বাহী সংস্থার প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
যদিও মিয়ানমার দাবি করেছে যে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে বাংলাদেশ জানিয়েছে, মিয়ানমার এখনও রোহিঙ্গাদের মাঝে আস্থা ও বিশ্বাস আনতে পারেনি। তারা নিজ দেশে তখনই ফিরে যাবে, যখন তারা মনে করবে মিয়ানমারে ফেরার পর তারা নিরাপদে থাকবে ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে।
ড. মোমেন বলেন, তবে একটি সুসংবাদ হচ্ছে মিয়ানমার যত দ্রুত সম্ভব তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে, যাদের বেশিরভাগ কক্সবাজার দিয়ে এসেছে। রাখাইনে রাজ্যে উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার কারণে রোহিঙ্গারা তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে রাজি হয়নি। এজন্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দুদফা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের সম্পৃক্ততা ‘অনেক বেশি কার্যকর’ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাপক সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি মিয়ানমারে চীনের অনেক বেশি সম্পৃক্ততা রয়েছে। যা খুব ভালো একটা ব্যাপার।’
হাইকমিশনার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গারা যাতে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যেতে পারে তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সম্প্রতি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমাধান ও মধ্যস্থতার জন্য ‘সক্রিয়ভাবে’ কাজ করতে চীনারা তৈরি আছে।
‘চীনারা যেমন বলেন, প্রতিবেশীরা হলো পরিবারের সদস্যদের মতো যারা একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। যদি প্রয়োজন হয় দুই প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের সহায়তার ক্ষেত্রে চীনারা পিছিয়ে থাকবে না,’ উল্লেখ করেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত জিমিং সম্প্রতি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শন করেছেন যা এই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নতি ও সমৃদ্ধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে চীনাদের ‘দৃঢ় সংকল্প’র প্রতিফলন বলে মনে করছেন।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে এটা বিশ্বাস করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, ‘তিনি বিশ্বাস করেন তারা ফেরত যাবেন। রাখাইন রাজ্যে অনুকূল পরিবেশ থাকলে রোহিঙ্গারা শেষ পর্যন্ত তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চায়।’
ব্রিটিশ কূটনীতিক রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরির ওপর জোর দিতে বলেন, যাতে রোহিঙ্গারা নিরাপদে ফিরে যেতে পারে।
মিয়ানমারের ওপর ‘বিশ্বব্যাপী ব্যাপক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা’ আরোপের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) প্রতি ফের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় সংসদ (ইপি)।
এছাড়াও তারা মিয়ানমারকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অস্ত্র সরবরাহ, সকল ধরনের অস্ত্র বিক্রয় বা স্থানান্তর, যুদ্ধোপকরণ, অন্যান্য সামরিক ও নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি স্থানান্তর, পাশাপাশি প্রশিক্ষণ বা অন্যান্য সামরিক বা নিরাপত্তা সহায়তা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে।
ইউরোপীয় সংসদ এর সর্বশেষ প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় গুরুতর অপরাধের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়েছে মিয়ানমারের এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দ করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউএনএসসি’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।