নিউ ইয়র্কে এক মেধাবী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর পড়াশুনার দায়িত্ব নিলেন ডা. ফেরদৌস খন্দকার
স্টাফ রিপোর্টার: নিউ ইয়র্কে প্রবাসী অসহায় বাংলাদেশী এক মেধাবী কলেজ ছাত্রের পড়াশুনার দায়িত্ব নিলেন ডা. ফেরদৌস খন্দকার। টাকার অভাবে যখন তার শিক্ষাজীবনে অন্ধকার নেমে এসেছিল ঠিক সেই সময় মানবতার আলোর মশাল নিয়ে দরিদ্র পরিবারের সেই শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ালেন সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত এই বাংলাদেশি চিকিৎসক।
কলেজ ছাত্রের বাবা কাজী ( পুরো নাম গোপন রাখা হলো) নিউ ইয়র্ক মেইলকে টেলিফোনে জানান, ২০০৭ সালে তিনি আমেরিকা আসেন এবং নিউ ইয়র্কে বসবাস শুরু করেন। এসময় দু’জন বন্ধুর সাথে পোশাকের ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৫ সালে তার স্ত্রী সন্তানদের ভিসা হওয়ার পর তাদের আনতে দেশে যান। ফিরে এসে দেখেন ব্যবসার সমস্ত টাকা নিয়ে বন্ধুরা অন্যত্র চলে গেছেন। দুই সন্তার আর স্ত্রীকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। কিছুদিন পর ব্যয়বহুল এ শহর ছেড়ে প্রথমে ফ্লোরিডা এবং একমাস পরে মিশিগান গিয়ে বসবাস শুরু করেন। চারবছর পর সেখান থেকে গত বছর নভেম্বরে আবারো ফিরে আসেন নিউ ইয়র্ক। কুইন্সের উডসাইটে বসবাস শুরু করেন। ফুটপথের একটি ফলের দোকানে কাজ নেন। বড় ছেলেকে ভর্তি করেন কুইন্সবরো কলেজে। কম্পিউটার এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের দ্বীতিয় সেমিস্টারের ছাত্র সে। ভবিষ্যত স্বপ্ন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবার। কিন্তু ছেলেকে কলেজে ভর্তির সময় বিপাকে পড়েন দরিদ্র পিতা। অন্য রাজ্য থেকে আসার কারণে ভর্তি এবং সেমিস্টার ফি নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। কোনো রাজ্যে একটানা ১৮মাস না থাকলে সরকারি সুবিধা পাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় বিপদে পড়ে যান তিনি। রেজাল্ট ভালো থাকায় কলে কর্তৃপক্ষ সেমিস্টার ফি কিছুটা কমালেও সেটা পরিশোধ করার মতো আর্থিক সক্ষমতা তার ছিল না। ফলে সন্তানের শিক্ষাজীবনে নেমে আসে অন্ধকার।
কাজী জানান, তার ছোটো ছেলে টেন গ্রেডে পড়াশুনা করছে আর মেয়ের বয়স ৩ বছর। গত তিন মাস ধরে তিনি ফুটপথে একটি ফলের দোকানে কাজ করেন স্বল্প বেতনে। ডেইল ব্যাসিস সেই আয় দিয়ে কোনোরকম সংসার চলছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে গত ৬মার্চ ফলের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তার একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অসহায় হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ডা. ফেরদৌস খন্দকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছেন এটা জানার পর আমি তার ফোন নম্বরে ম্যাসেজ পাঠাই সাহায্যের জন্য। এরপর তিনি আমার বাসায় আসেন খাদ্য সহায়তা নিয়ে আসেন এবং সাথে একটি গিফট কার্ড দেন। আমি তাকে আমার ছেলের কলেজের সেমিস্টার ফি নিয়ে সমস্যার কথা বলি। তিনি পরদিন তার চেম্বারে দেখা করতে বলেন। বৃহষ্পতিবার ছেলেসহ আমি তার জ্যাকসন হাইটসের চেম্বারে গেলে তিনি সবকিছু শুনে আমার ছেলের সেমিস্টার ফি দিয়ে দেন এবং তার ভবিষ্যতে পড়াশুনার সমস্ত দায়িত্ব নেন। তিনি জানান, ডা. ফেরদৌস খন্দকার আমার ছেলের দায়িত্ব নিয়ে মানব সেবার আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, নিজের দেশের মানুষের পাশে এভাবে আরো অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়ালে প্রবাসীদের আর সমস্যা থাকবে না। মেধাবী কলেজ ছাত্রটিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তার জীবনের নতুন অভিভাবক ডা. ফেরদৌস খন্দকারের প্রতি। নিউ ইয়র্ক মেইলকে তিনি বলেছেন, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার তার স্বপ্নের পথে আর কোনো বাধা থাকলো না। বড় হয়ে তিনিও ডা. ফেরদৌস খন্দকারের মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান।