নিউ ইয়র্কে এক অসহায় নারী চিকিৎসকের সাহায্যে এগিয়ে আসলেন ডা. ফেরদৌস খন্দকার
স্টাফ রিপোর্টার:
বৃদ্ধ বাবা-মা নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন সদ্য দেশ থেকে আসা এক নারী চিকিৎসক। অর্থাভাবে খাদ্য সংকটে পড়ে তিন সদস্যের পরিবারটি। পুষ্টিকর খাবার এমনকি ফল কেনারও সাধ্য ছিল না সন্তান সম্ভাবা ওই নারী চিকিৎসকের। খাদ্য ফুরিয়ে যাবার ভয়ে একবার খেতে পারে সেই পরিমাণ খাবার তিনবার খেতে হচ্ছিল তাদের। অসহায় এই নারী চিকিৎসকের পবিারের পাশে দাঁড়ালেন নিউ ইয়র্কের ”মানবতার দূত” খ্যাত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকার। খাদ্য সহায়তা ছাড়াও নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন তিনি। সহায়তা পেয়ে হাসি ফুটেছে ওই অসহায় পরিবারটির সদস্যদের মুখে।
দু’মাস আগে ইমিগ্রান্ট ভিসায় নিউ ইয়র্ক আসেন চিকিৎসক জয়া মন্ডল (ছদ্দ নাম)। শেষ মুহুর্তে ভিসা জটিলতার কারণে তার স্বামী আসতে পারেননি। নিদ্দির্ষ্ট সময়ের মধ্যে আসার বাধ্যবাধকতা থাকায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়েই নিউ ইয়র্ক চলে আসেন ডা. জয়া মন্ডল। উডসাইট এলাকায় একরুমের একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস শুরু করেন। অপেক্ষায় ছিলেন স্বামী হয়তো চলে আসবেন শিগগির। এরই মধ্যে নিউ ইয়র্ক জুড়ে শুরু হয় করোনার প্রকোপ। বৃদ্ধ বাবা কাজ শুরু করেন একটি ক্যান্ডি স্টোরে। হঠাৎ লকডাউনের কারণে পুরো নিউ ইয়র্কে সব ধরনের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। একই সাথে বন্ধ হয়ে যায় তার বাবার কর্মস্থলটিও। সঙ্গে করে আনা অর্থ প্রায় শেষ। দেশ থেকেও টাকা আনার কোনো মাধ্যম পাননি। সন্তান সম্ভাবা মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন বাবা মা। ঘরের খাবার দ্রুত ফুরিয়ে যাবে সেই ভয়ে একবারের খাবার অল্প অল্প করে তিনবার খাচ্ছিলেন তারা। ফেসবুকে ডা. ফেরদৌস খন্দকারের মানবিক সহায়তার বিষয়ে দেখার পর কন্ট্রোল রুমের নম্বরে সহায়তার জন্য ম্যাসেজ পাঠান। পরদিন ডা. ফেরদৌস খন্দকারের স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যরা খাদ্য সহায়তা নিয়ে পৌঁছান সেই বাড়িতে। তখনি তারা জানতে পারেন নারী চিকিৎসকের পরিবারের মানবেতর জীবনযাপনের গল্প। স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে জানার পর ডা. ফেরদৌস খন্দকার নিজে ফোন করেন ওই নারী চিকিৎসককে। দুর্দিনে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে তাকে নিজের চেম্বারে আসতে বলেন।
পরদিন চিকিৎসক জয়া মন্ডল চেম্বারে আসলে সবকিছু শুনে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন ডা. ফেরদৌস খন্দকার। এসময় তার হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন। ডা. জয়া মন্ডলের মা টেলিফোনে নিউ ইয়র্ক মেইলকে জানান, দু:সময়ে আপনজনদের কাছে পাইনি। চরম বিপদের দিনে এমন একজন মানুষকে কাছে পাবো ভাবতেই পারিনি। তিনি বলেন, ডা. ফেরদৌস খন্দকার যে পরিমান অর্থ সহায়তা দিয়েছেন তাতে আগামী তিন মাস আমার মেয়েকে নিয়ে আর কোনো চিন্তা করতে হবে না। ডা. জয়া টেলিফোনে নিউ ইয়র্ক মেইলকে জানান, আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। মাত্র একমাস আগে নিউ ইয়র্ক আসার কারণে সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি। আগামী মাসে আমার সন্তান ডেলিভারী হবে সে কারণে নিজে কোনো কাজ করতে পারিনি। এমন বিপদের সময় মানবতার দূত হয়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন স্যার(ডা. ফেরদৌস খন্দকার)। তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দিলে সামনের দিনগুলো কিভাবে পার করতাম সেটা ভাবতেই পারছি না।
টেলিফোনে ডা. ফেরদৌস খন্দকার নিউ ইয়র্ক মেইলকে জানান, নিউ ইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশীদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি গত দু’মাস ধরে। আমার সাথে বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে প্রবাসীদের বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে। যখন একজন স্বেচ্ছাসেবকের কাছে ওই নারী চিকিৎসকের অসহায়ত্বের বিষয়টি শুনলাম তখন সত্যিই খুব কষ্ট পেয়েছি। প্রথমত: তিনি আমার দেশের মানুষ এবং তিনি আমার মতোই একজন চিকিৎসক। তাই সবার আগে তার পাশে দাঁড়ানো আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমার সামর্থ অনুযায়ি তাকে সহায়তা করেছি। ভবিষ্যতে তার যে কোনো ধরনের সহায়তা করবো বলে তাকে জানিয়ে দিয়েছি। সন্তান ডেলিভারী হবার পর সুস্থ্য হলে তার চাকরির ব্যাপারেও সব ধরনের সহযোগিতা করার ও আশ্বাস দেন এই মানবতার ফেরিওয়ালা।