যুক্তরাষ্ট্রে ১১ লাখ বিদেশী শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত: ট্রাম প্রশাসনের বিরুদ্ধে ১৮রাজ্যে মামলা
বিশেষ প্রতিনিধি, নিউ ইয়র্ক:
ভিসা জটিলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ১১ লাখ বিদেশী শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত। অনলাইন ক্লাস হলে শিক্ষার্থীদের ভিসা দেওয়া হবে না বলে সম্প্রতি এক নির্দেশনা জারি করে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন বিভাগ। এর ফলে ১১ লাখেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাদেরকে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার সরকারের এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৮টি রাজ্যে শিক্ষার্থীদের পক্ষে মামলা হয়েছে।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে প্রথমেই আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এর সঙ্গে এখন যোগ দিচ্ছে রাজ্যের সরকারগুলো। ফেডারেল আদালতে সোমবার দায়ের করা মামলায় ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যুরা হেলি বলেন, ইমিগ্রেশন বিভাগের এমন সিদ্ধান্ত কেবল ফ্যাকাল্টি মেম্বার বা শিক্ষার্থীদেরই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে না, কয়েক লাখ পরিবারের লোকজনকেও ঝুঁকিতে ফেলবে।
যুক্তরাষ্ট্রে মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে করোনাভাইরাস ঠেকাতে লকডাউন শুরু হয়। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘমেয়াদে অনলাইনে ক্লাস চালু করার প্রস্তুতি নেয়।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আংশিক ফেরানোর কথা বললেও ক্লাস অনলাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।
এ অবস্থায় সরকার হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করে দেশে ফেরৎ পাঠানোর। এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন এক নির্দেশনা জারি করে। এই নির্দেশনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে মামলা হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসি, ম্যারিল্যান্ড, ইলিনয়, কলোরাডো, কানেকটিকাট, মিশিগান, নিউ মেক্সিকো, ম্যাসাচুসেটস, মিনেসোটা, নেভাদাসহ ১৮টি অঙ্গরাজ্য এই মামলায় যোগ দিয়েছে।
নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিসিয়া জেমস মঙ্গলবার ১৪ জুলাই এ নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত সময় না নিয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি যে নির্দেশ জারি করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের হয়রানি থেকে রক্ষার জন্য আদেশটির স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।
নিউজার্সির অ্যাটর্নি জেনারেল গারবির গ্রোয়াল বলেন, প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন, অনৈতিক ও বেআইনি। এতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়াসহ তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার প্রয়াস ব্যহত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ট্রাম প্রশাসনের এই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে শুধু শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোও সংকটের মুখে পড়বে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছর ১০ থেকে ১১লাখ বিদেশি মিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চীন থেকে আসে ৩লাখ ৭০ হাজার এবং ভারত থেকে ২ লাখ ২ হাজার। কানাডা থেকে ২৬ হাজার, দক্ষিন কোরিয়া থেকে ৫২ হাজার, সৌদিআরব থেকে ৩৭ হাজার, জাপান, তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম থেকে ২০-২৫ হাজার করে এবং ব্রাজিল ও মেক্সিকো থেকে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী আসে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পায় যুক্তরাষ্ট্রে। মোট শিক্ষার্থীর ৫২ভাগই আসে চীন ও ভারত থেকে।