পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ নিউ ইয়র্কে খুন
বিশেষ প্রতিনিধি, নিউ ইয়র্ক:
বাংলাদেশে অনলাইন এ্যাপ ভিত্তিক পরিবহন সেবা দানকারি প্রতিষ্ঠান `পাঠাও' সার্ভিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ নিউ ইয়র্কে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে নিউইয়র্ক পুলিশ (এনওয়াইপিডি) ম্যানহাটন শহরের ইস্ট হাউস্টন স্ট্রিটে তার অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট থেকে খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে। পুলিশ ধারনা করছে-ইলেকট্রিক করাত দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চরম আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ফাহিমের এক বোনের ফোন পেয়ে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ওই অ্যাপার্টমেন্টে যায়। অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ব্যাগ ও একটি ইলেকট্রিক করাতের পাশে ফাহিম সালেহর খণ্ডিত লাশ দেখতে পায় পুলিশ। ইলেকট্রিক করাত দিয়ে মৃতদেহ থেকে হাত, পা ও মাথা বিচ্ছিন্ন করে পাশের একটি ব্যাগে রাখা হয়। এনওয়াইপিডি পুরো বিষয়টি তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত এ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
এনওয়াইপিডির বরাত দিয়ে নিউইয়র্কের ‘ডেইলি নিউজ’ পত্রিকা জানিয়েছে, সোয়া দুই মিলিয়ন ডলার মূল্যের অ্যাপার্টমেন্টে পাওয়া ক্ষতবিক্ষত লাশটি ফাহিম সালেহর। বাংলাদেশে পাঠাও কোম্পানিতে নিজের শেয়ার বিক্রি করে নাইজেরিয়াতে একই ধরনের ব্যবসা শুরু করেছিলেন পেশায় ওয়েব ডেভেলপার ফাহিম সালেহ । গত জানুয়ারিতে নাইজেরিয়ায় ‘গোকাডা’ নামের কোম্পানিটি সরকারি নিষেধাজ্ঞায় পড়ে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাহিম সালেহর বোন পুলিশকে ফোন করে জানান, তিনি তাঁর ভাই ফাহিম সালেহর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। পুলিশকে তিনি একটু খোঁজ নিতে অনুরোধ করেন। বোনের ফোন পেয়েই ওই অ্যাপার্টমেন্টে একা থাকা ফাহিম সালেহকে খুঁজতে যায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে তাঁর খণ্ডিত লাশ উদ্ধার হয়।
অ্যাপার্টমেন্টের সিসি ক্যামেরা থেকে দেখা গেছে, ১৩ জুলাই ফাহিম সালেহ ভবনের সপ্তম তলায় তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার জন্য লিফটে উঠছেন। এ সময় স্যুট পরা, হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক পরা একজনকে তাঁর পেছনে যেতে দেখা গেছে। এর পরই হয়তো ফাহিমকে হত্যা করা হয়। ওই ব্যক্তিকে পেশাদার হত্যাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাঁর হাতে একটি ব্রিফকেস ছিল।
ফাহিম সালেহর জন্ম ১৯৮৬ সালে। তাঁর বাবার নাম সালেহ উদ্দিন। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামে। ফাহিম পড়াশোনা করেছেন আমেরিকার বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে। তিনি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা। ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় গিয়ে পাঠাও চালু করে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন তিনি। ফাহিম নাইজেরিয়া ও কলম্বিয়ায় এমন আরও দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানির মালিক।
করোনার মহামারির পুরো সময় তিনি ছিলেন মা-বাবার সাথে পোকিস্পিতে। কয়েকদিন আগে ফেরেন নিজের এ্যাপার্টমেন্টে। স্বল্পভাষী ফাহিমের মৃত্যু সংবাদে গোটা কমিউনিটি স্তম্ভিত। এই অল্প বয়সেই ফাহিমের সম্পদের পরিমাণ প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলার। তবুও কোন অহমিকা ছিল না তার। সাদামাটা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ফাহিম ছিলেন অবিবাহিত।