যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯কোটি আগাম ভোট: টানটান উত্তেজনা
তুহিন সানজিদ, নিউ ইয়র্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রচিত হয়েছে নতুন ইতিহাস। ৯ কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছে। কয়েক দশকের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এই আগাম ভোট প্রদান। নির্বাচনের আর মাত্র ২দিন বাকী। ভোটের আগে ১০ কোটি ভোট পড়তে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলো। শেষ মুহুর্তে নির্বাচন নিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে দেশজুড়ে। সারা বিশ্বের চোখ ও এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে।
নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন পরবর্তি সময়ে সহিংসতা ঠেকাতে আইনশৃংখলা বাহিনী ব্যপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউ ইয়র্কসহ অন্যান্য শহরগুলোতে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে সেনা মোতায়েনও করা হতে পারে।
৫০টি রাজ্যের ৪৩ ভাগ ভোটার এই আগাম ভোট প্রদান অতীতের সব রের্কর্ড ভঙ্গ করেছে। কোনো কোনো রাজ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভোট পড়েছে ব্যলটবাক্সে।
শেষ মুহুর্তে প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্য। বিশেষ করে সুইং স্টেট গুলোর ইলেকটোরাল ভোট গুলোই তাদের লক্ষ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গণমাধ্যম সিএনএন সর্বশেষ নির্বাচনী জরিপে ডেমোক্রাট প্রার্থী জো বাইডেনকেই এগিয়ে রেখেছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে তিনি ১২ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। আগাম ভোট প্রদানকারীদের ৬৪শতাংশ এবং আর নারী ভোটারদের ৬১ ভাগ বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন। শ্বেতাংঙ্গ ভোটারদের ক্ষেত্রে ব্যবধান অনেকটা কমিয়ে এনেছেন বাইডেন। সর্বশেষ এই জরিপে শ্বেতাংঙ্গ ভোটারদের ৫০ ভাগ পড়েছে ট্রাম্পের পক্ষে আর ৪৮ ভাগ ভোটার বেছে নিয়েছেন বাইডেনকে। এক সপ্তাহ আগেও এই ব্যবধান ছিল ৬পয়েন্টেরও বেশি।
শেষ মুহুর্তে দুই প্রার্থীই জিততে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। প্রতিদিন তারা ৩ থেকে ৫টি রাজ্যে সফর করছেন। জিততে হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মিসিগান, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন এবং ফ্লোরিডায় জয়ের কোনো বিকল্প নেই। ২০১৬ সালেও তিনি এই চারটি রাজ্যে চমক দেখিয়েছিলেন। বিশেষ করে ফ্লোরিডা তার প্রধান লক্ষ্য। আর এজন্য নিউ ইয়র্কের পরিবর্তে এবার ফ্লোরিডায় নিজের আগাম ভোট দিয়েছেন। এছাড়া ডেমোক্রাট দুর্গ বলে পরিচিত আ্যারিজোনা এবং জর্জিয়াতেও হানা দিতে চান ট্রাম্প।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব রাজ্যগুলোতে কয়েক দশক ধরে ডেমোক্রাটদের আধিপত্যই বেশি। বরং রিপাবলিকানদের অন্যতম প্রধান দুর্গ টেক্সাসে এবার আধিপত্য বিস্তার করেছে ডেমোক্রাট প্রার্থী জো বাইডেন। আর এটাই কপালে ভাঁজ ফেলেছে ট্রাম্প শিবিরে। অন্যদিকে সুইং স্টেট পেনসিলভানিয়ায় দিনদিন বাইডেনের পক্ষে ভোট বেশি পড়ছে। গত নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে খুব অল্প ব্যবধানে এখানে হেরেছিলেন হিলারী ক্লিনটন। এবার অনেক বেশি ব্যবধানে সেখানে ট্রাম্পের পরাজয় হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। ২০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের এই রাজ্যটি বাইডেনের জয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এবারের নির্বাচনী প্রচারে বাংলাদেশীদের ব্যপক অংশগ্রহন প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
সমর্থকরা সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। প্রচারণা চালাচ্ছেন সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও। বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বাড়িবাড়ি গিয়েও পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন তারা।
ডেমোক্রাট দলের সমর্থকরা বলছেন-”জো বাইডেন ইজ দ্যা বেস্ট”। অভিবাসন বান্ধব বাইডেন বিজয়ী হলে তিনি নতুন এক আমেরিকা উপহার দিবেন। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক মন্দা আর ট্রাম্পের নানান দুর্নীতি ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন তারা।
আর রিপাবলিকানরা বলছেন-”ডোনাল্ড ট্রাম্প ইজ গ্রেট প্রেসিডেন্ট”। দেশপ্রেমিক ট্রাম্প বিজয়ী হলে আমেরিকাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন।ু
বাংলাদেশী-আমেরিকান রিপাবলিকান এ্যালায়েন্স এর চেয়ারম্যান নাসির খান পল জানিয়েছেন, দেশব্যপী কোনো জরিপ নির্বাচনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। ট্রাম্পকে “গ্রেট প্রেসিডেন্ট” উল্লেখ করে তিনি জানান, ৩ নভেম্বর ভোটের দিনই ট্রাম্পের নিরব সমর্থকরা ভোট দেবে। তাই এখনকার জরিপ কোনো কাজে আসবে না। আর প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যে তিন/চারটি সুইং স্টেটে জয় প্রয়োজন সেখানে অনেক বেশি ব্যবধানে জিতবেন ট্রাম্প।
সাউথ আল আবামা ইউনিভার্সিটির ডিজিটাল জার্নালিজম বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. এম দেলোয়ার হোসাইন জানিয়েছেন, গত চার বছর অনেককিছুতেই ব্যর্থ হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস মোবাবেলা, অর্থনেতিক মন্দা এবং ব্যাক্তিগত ট্যাক্স ফাঁকির বদনাম এবারের নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। আর এসব কারণে তার অনেক সমর্থক তার পাশ থেকে সরে গেছে। ”ব্লাক লাইভ ম্যাটারস” আন্দোলন এবার তার পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রাখতে পারে। এই আন্দোলনে শ্বেতাঙ্গরাও অংশ নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন পরবর্তি সময়ে পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সহিংসতা বাড়তে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন-বো বাইডেন ক্লিন ইমেজের কারণে ব্যপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক ব্যর্থতার অভিযোগ মাথায় নিয়েও আবারো চমক দেখাতে পারেন।