যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলা: নিহত ১: কারফিউ জারি
ডেস্ক রিপোর্ট: ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ ভবন বা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটালে ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের নজিরবিহীন এবং ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তখন ভবনটিতে কংগ্রেসের ও সিনেটের যৌথ অধিবেশন চলছিল। বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে এই হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত অসংখ্য ব্যাক্তি আহত হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে ক্যাপিটাল হিল এবং আশেপাশের এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা।
সিএনএন ও বিবিসি জানায়, সকাল থেকেই ক্যাপিটল ভবনের চারপাশে জড়ো হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক। তাদের মধ্যে ছিল মারমুখী ভাব। প্রথমে তারা ওই ভবনে ঢোকার চেষ্টা চালান। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি চালায় এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ক্যাপিটল ভবন থেকে ট্রাম্প-সমর্থকদের হটিয়ে দিতে পুলিশকে অন্তত তিন ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালাতে হয়।
ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির মেট্রোপলিটান পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন ধরনের অন্তত ৫টি বন্দুক জব্দ করেছে। আহত কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ ঘটনার পর যৌথ অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায়। তবে রাতে আবার তা শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনে কারফিউ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। ট্রাম্প একটি ভিডিও বার্তায় তার সমর্থকদের বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করেছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আমেরিকার আইন-প্রণেতারা যখন নভেম্বরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক তখন ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ে। কয়েক ঘণ্টা ভবন কার্যত দখল করে রাখার পর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাইরে চলে যেতে থাকে।
রাজধানী ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টার করফিউ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু এরপরও শত শত বিক্ষোভকারীকে রাজপথে জটলা পাকাতে দেখা যায়। ভবনের ভেতরে বিক্ষোভকারীদের 'আমরা ট্রাম্পকে ভালোবাসি' শ্লোগান দিতে দিতে মিছিল করতে দেখা গেছে। একজন ট্রাম্প সমর্থকের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে তিনি সেনেটের সভাপতির আসনে বসে আছেন।
এক বিবৃতিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ইতিহাস সঠিকভাবেই ক্যাপিটলের ওপর এ হামলার ঘটনা মনে রাখবে; আর সেটি হচ্ছে– এ মুহূর্তটি প্রচণ্ড অসম্মান এবং এই জাতির জন্য লজ্জাজনক।
এক বিবৃতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ বলেছেন, এটি পুরোপুরি অসুস্থ ও হৃদয়বিদারক দৃশ্য। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল কোনো দেশে এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলকে বিতর্কিত করা হয়- আমাদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে এর কোনো স্থান নেই।
এ ঘটনায় বিস্মিত ও স্তব্ধ হওয়ার প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্বের রাজনৈতিক নেতারা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ঘটনাকে 'লজ্জাজনক' বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে 'শান্তিপূর্ণ ও সুসৃঙ্খল ক্ষমতা হস্তান্তরের' আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। খবর বিবিসির।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের উচিত শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভোটারদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া এবং গণতন্ত্রের পদদলন না করা।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, গণতন্ত্রের ওপর এই আঘাতের ঘটনায় কানাডিয়ানরা প্রচণ্ড বিরক্ত।
একইভাবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দোকে সহিংসতাকে প্রত্যাহার করে কংগ্রেসের সদস্যদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান পিনেরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন।
সহিংসতার পরও সিনেটে অধিবেশন শুরু হওয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটালে আজকের দিনটি একটি কালো দিন হিসেবে উল্লেখ থাকবে।
সিনেটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা পেন্স সবসময়ই কংগ্রেসের নেতৃত্ব, পুলিশ এবং বিচার ও প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন যাতে ক্যাপিটালকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কংগ্রেস আবার শুরু করা যায়।
পরে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, যারা আজ ক্যাপিটালে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছেন, আপনার জয়ী হতে পারেননি।