তারুণ্যের শক্তিই দুর্নীতি প্রতিরোধ করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে
তুহিন সানজিদ, নিউইয়র্ক:
সাতক্ষীরা দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক এর স্পেশাল পিপি এড. মোস্তফা আসাদুজ্জামান (দিলু) বলেছেন, দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাস বন্ধ করে সমাজকে বদলে দিতে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। দিন বদলের এই সামাজিক আন্দোলনে একমাত্র তরুণরাই পারে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসতে। তারুণ্যের শক্তিই একদিন বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে।
স্বপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে নিউইয়র্ক মেইলের সাথে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
নিউইয়র্কের আলবেনি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করছেন তার একমাত্র ছেলে মোস্তফা আসিফ জামান। পুত্রবধূ উম্মে জামান তুলিও বসবাস করেন স্বামীর সাথে। সম্প্রতি তাদের কোল আলো করে কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছেন। সদ্য জন্ম নেয়া নাতনি আনামতা জামানকে দেখতে গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিনি নিউইয়র্ক আসেন। এরপর থেকে প্রবাসীদের অভ্যর্থনা আর ফুলেল শুভেচ্ছায় ভাসছেন সিনিয়র এই আইনজীবী।
নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রবাসীদের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কমিউনিটি নেতারা, সাতক্ষীরার প্রবাসীরা তার সাথে দেখা করে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
একান্ত সাক্ষাৎকারে এড. মোস্তফা আসাদুজ্জামান আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের পর থেকে দেশে দুর্নীতি অনেকটা কমে এসেছে। এই কমিশন গঠিত না হলে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যেত না। সাতক্ষীরার স্পেশাল পিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে চেষ্টা করছি যাতে দুর্নীতিবাজরা কঠোর শাস্তি পায়। সাবেক সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কয়েকজনের নামে ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা আছে। দোষিরা অবশ্যই শাস্তি পাবে বলে তিনি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
নিউইয়র্কে স্থানীয় একটি রেষ্টুরেন্টে এড. মোস্তফা আসাদুজ্জামান দিলুকে সাতক্ষীরা প্রবাসীদের সংবর্ধনা। ছবি: নিউ ইয়র্ক মেইল
এক প্রশ্নের জবাবে এড. দিলু বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের পর সমাজের এক শ্রেণির মুখোশধারীদের প্রকৃত রূপ দেশের মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করা গেছে। ফলে সমাজের মানুষ এখন জানে কারা দুর্নীতিবাজ। এ কারণে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ এখন ঘুষ না দিয়েও তাদের কাজটা করে নিতে পারছে।
দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের ধরার জন্য দুদকের ফাঁদ পাতার কৌশলটি সারা দেশে ব্যপক প্রশংসিত হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এর ফলে বিভিন্ন সেবাদাতা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এখন আতঙ্কে থাকে, ঘুষ চাইতে ভয় পায়।
নিউইয়র্ক জেএফকে বিমানবন্দরে বাবা-মাকে স্বাগত জানান মোস্তফা আসিফ জামান ও তার স্ত্রী উম্মে জামান। ছবি: নিউ ইয়র্ক মেইল
এড, দিলু ১৯৬২ সালের ২৭ জানুয়ারি যশোর জেলার শার্শা থানার বাগআচড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো. ছিয়ামউদ্দিন এবং মা ছামেনা খাতুন। বাবা ছিলেন স্বনামধন্য স্কুল শিক্ষক। ব্রিটিশ আমলে এই এলাকায় হাতেগোনা কয়েকজন গ্রাজুয়েটদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
আইনজীবী দিলু বাগআচড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি, বাগআচড়া ইউনাইটেড ইচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে প্রথম শ্রেণিতে মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর সিটি ল’কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে কৃতিত্বের সাথে এলএলবি পাশ করেন। এরপর ১৯৮৭ সাল থেকে সাতক্ষীরা আদালতে আইন পেশা শুরু করেন এবং বিশেষ দক্ষতার কারণে অল্প দিনেই সুনাম অর্জন করেন। তিনি ২০০৮ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক এর সাতক্ষীরা জেলার স্পোশাল পিপি হিসেবে নিয়োগ পান।
তিনি ১৯৮২ সালে সাতক্ষীরার প্রখ্যাত আইনজীবী এড. দেলদার রহমানের কন্যা শাহিনা আক্তারকে বিয়ে করেন। তারা দুই সন্তানের জনক-জননী। কন্যা ডা. অনামিকা জামান রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত আর পুত্র মোস্তফা আসিফ জামান (শিমুল) বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ আলবেনিতে ডিজিটাল মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী। এর আগে তিনি সাইপ্রাসের লিড়রা কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
প্রবাসী আইনজীবীদের সাথে স্পেশাল পিপি এড. মোস্তফা আসাদুজ্জামান দিলু । ছবি: নিউ ইয়র্ক মেইল
প্রবাসীদের অভ্যর্থনা আর শুভেচ্ছার জবাবে সাতক্ষীরার স্বনামধন্য এই আইনজীবী আরো বলেন, নিউইয়র্কে না আসলে জানতেই পারতাম না চেনা-অচেনা মানুষগুলো আমাকে এত ভালোবাসে। গত দেড়মাসে মধ্যে অধিকাংশ সময়ই কেটেছে প্রবাসীদের বাসায় দাওয়াত খেয়ে আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে। এসব মানুষেরা এত বেশি সম্মান আর ভালোবাসা দিয়েছেন যে তাদের ঋন কখনও শোধ করতে পারবো না।
সাতক্ষীরার জনপ্রিয় এই আইনজীবী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং মাদকমুক্ত সাতক্ষীরা দেখতে চাই। যে সাতক্ষীরা হবে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটন নগরী। আর এজন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী সাতক্ষীরা বাসীদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।