অবশেষে সমাধান মিলেছে পদ্মা সেতুর ২২টি পিলারের
২০১৫ সালের ১২ই ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্ভোধন করেন। তবে আকস্মিক প্রাকৃতিক জটিলতায় পুরো বদলে ফেলতে হয় পরিকল্পনা। অশেষে সমাধান মিলেছে পদ্মা সেতুর ২২টি পিলারের জটিলতার। এক একটি পিলারে ছয়টি’র জায়গায় এখন ৭টি করে খুঁটি বসিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। গত প্রায় একবছর ধরে বিষয়টি ঝুলে থাকলেও সম্প্রতি এ পিলারগুলোর নকশা তুলে দেওয়া হয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির হাতে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এ পিলারগুলোতে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
জাজিরা প্রান্তের ১৪টি পিলারে নদীর তলদেশের মাটির গঠনে পাওয়া যায় জটিলতা। ছোটখাটো জটিলতা পাওয়া যায় আরো ৮টি পিলারে। সব মিলে মাওয়া প্রান্তের ২২টি পিলারে সমস্যার কারণে এ প্রান্তের কাজ কার্যত বন্ধম রেখে কাজ শুরু করা হয় জাজিরা প্রান্তে। জাজিরায় বর্তমানে ৪টি স্প্যান দৃশ্যমান, চলতি মাসেই আরও একটি বসার অপেক্ষায়, সেখানে এখন পর্যন্ত মাওয়া প্রান্তে পিলার দৃশ্যমান হয়েছে মাত্র ১টি। অপেক্ষা, ছিল কখন পাওয়া যাবে বাকী পিলারগুলোর নকশা।
এ কাজে প্রায় এক বছর আগে দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেনডেল, ডেনমার্কের কাউয়িসহ ৬টি বিদেশি দক্ষ প্রতিষ্ঠানকে। দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে সময়। শেষ পর্যন্ত তাদের দেওয়া সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে পদ্মা সেতুর পরামর্শক দল।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের যেই জটিলতা ছিল তার অনেকটাই কেটে গেছে। আমরা মনে করি কোনো সমস্যা নেই। ঠিকাদারও কাজ করে যাচ্ছে।
আগে এক একটি পিলারে ১২৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ৬টি করে খুঁটি বসানো হয়েছে। নতুন নকশার পিলারগুলোতে খুঁটি হবে ৭টি। তবে এ ক্ষেত্রে ১২৪ মিটার দৈর্ঘ্য কমে আসবে ৯৮ থেকে ১১৪ মিটারে।
২২ টি পিলারের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করার আগে আবারো টেস্ট করতে হবে মাটির গঠন। ২/৩টি পিলারে মাটির প্রত্যাশিত গঠন পেতে কৃত্রিমভাবে করতে হবে স্ক্রিন গ্রাউটিং। ৪টি পিলারের নকশা এর মধ্যে চূড়ান্ত করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে।
পদ্মা সেতুর পরামর্শক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ছয়টা পাইলের যে রেজিস্ট্যান্স তার চাইতে সাতটা পাইলে বেশি হবে। তবে তাতে ট্রাসের ডিজাইন পরিবর্তন করতে হবে কিনা সে বিষয়টি দেখতে হবে।
তবে নদীর এ প্রান্তে বর্ষা মৌসুমে স্রোত বেড়ে যাবে, তাই আগামী বছরের জানুয়ারির আগে নতুন নকশায় কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না। এখন পর্যন্ত পুরো সেতুর কাজে ৭৬ ভাগ অগ্রগতি হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ৫৭ ভাগ।
আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর কাজ উদ্বোধন করেন ২০১৫ সালের ১২ই ডিসেম্বর। মাওয়া প্রান্তের ৬ নম্বর পিলারে কাজ শুরু হলেও আকস্মিক প্রাকৃতিক জটিলতায় পুরো বদলে ফেলতে হয় পরিকল্পনা।
পদ্মা সেতু, এক সঙ্গে সক্ষমতা আর বিস্ময়ের নাম। নদীর বুকে যান্ত্রিক শব্দ, দেশি বিদেশি প্রকৌশলীদের ব্যস্ততা আর নতুন নতুন অবকাঠামো-সব মিলে দৃশ্যমান সেতুর একাংশ যেন অন্য এক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।