পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রাশিয়া সফরে পশিমা দেশগুলোয় অসন্তোষ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী চলতি মাসের শুরুর দিকে দু’দিনের সফরে রাশিয়া যাওয়ায় এ নিয়ে পশিমা দেশগুলোর মধ্যে এক ধরণের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
তিনি এমন এক সময় দেশটিতে সফর করলেন যখন সাবেক রুশ গুপ্তচর ও তার মেয়েকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মস্কোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশকে পাশে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা।
দেশটির পরররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে যদিওবা মাহমুদ আলীর বৈঠকে এ নিয়ে নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছেনি ঢাকা-মস্কো। তবুও এ সফরকে ঘিরে বৃহস্পতিবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও মিশনারী প্রধানরা গত বৃহস্পতিবার আমাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, রাশার সঙ্গে কূটনীতিক প্রত্যাহার ও বহিস্কারের শীতল যুদ্ধে অংশনেওয়া দেশগুলোর সংখ্যা এখন যেভাবে রয়েছে এভাবেই থাকবেনা। ক্রমেই সেটি বাড়বে। বিশ্বে পশ্চিমা দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি বন্ধু রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে বোঝাপাড়াও বেশ ভালো। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। রাশিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন দেশ যখন কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে চলছে সে সময় এ সফরটা ব্যাতিক্রমই বটে!
বৈশ্বিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টার অংশ হিসেবে মার্কিন, বৃটেনসহ তার মিত্র দেশগুলো এ ইস্যুতে ঢাকার সমর্থন আদায়ে সক্রিয় রয়েছে। রুশ গুপ্তচর ও তার মেয়েকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মস্কোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জুয়েল রিফম্যান পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সমর্থন কামনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বৈঠকে আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। রাশিয়ার কার্যকলাপে আমরা উদ্বিগ্ন। তারা আন্তর্জাতিক সব আইন ভঙ্গ করেছে। এর আগে বৃটেনের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের সমর্থন চাওয়া হয়েছে।
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তার মেয়ে ইউলিয়াকে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার মধ্যে যা কিছুই হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ কোনো ধরণের অবস্থান নেবে না। আন্তর্জাতিক ফোরমসহ জাতিসংঘে এ নিয়ে যদিকোনো পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয় সেখানেও বাংলাদেশ নীরব ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকবে।
এদিকে রুশগুপ্তচর হত্যা চেষ্টার তদন্ত করছে বৈশ্বিক রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক সংস্থা ওপিসিডব্লিউ। যার নির্বাহী চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। কি ধরনের গ্যাস ব্যবহার করে হত্যার চেষ্টা হয়েছে তাই তদন্ত করছে বৈশ্বিক রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক সংস্থা ওপিসিডব্লিউ। ওই সংস্থার বর্তমান চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে রাশিয়া কোনোভাবেই যুক্ত নয় দাবি করে গত ২২শে মার্চ একটি কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়েছে রাশিয়া। পশ্চিমা দেশগুলোর অন্যায় মূলক আচরণের সঙ্গে বাংলাদেশ যেনো না জড়ায় সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয় দেশটির পাঠানো কূটনৈতিক পত্রে।
প্রসঙ্গত, বৃটেনের স্যালিসবুরিতে গত ৪ঠা মার্চ এ ঘটনায় প্রায় ১৫০ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্তত ২৪টি দেশ। এ নিয়ে গত সপ্তাহে ৬০ জন মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার এবং রাশিয়ায় মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয় মস্কো।