শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ৩ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার ‘হাইব্রিড আক্রমণ’ নিয়ে সতর্কতা জার্মানির ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জনের মৃত্যু নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 24 May, 2018 11:38

কতোটা দীর্ঘ হবে খালেদা জিয়ার কারাবাস!

কতোটা দীর্ঘ হবে খালেদা জিয়ার কারাবাস!
খালেদা জিয়া

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা: 
কারাগার আর কারাবাস নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতির নতুন ধারা। সংযোজন হয়েছে নতুন ফর্মুলা। পুরোনো ”মাইনাস” কৌশলকে নতুন রূপ দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ ও আছে রাজনীতিকদের। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কারাবাস কতোটা দীর্ঘ হবে সেটাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
প্রায় চার মাস হতে চললো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাজীবন। এরই মধ্যে দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তার শারিরীক অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। অপরদিকে কারাকর্তৃপক্ষ বলছে তার শারীরিক অবস্থা ততোটা খারাপ নয়। এ নিয়ে রাজনীতির মাঠও কিছুটা উত্তপ্ত। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন। বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদার জিয়ার শারিরীক অবস্থার নিয়ে বক্তব্য রাখলে বা আশংকা প্রকাশ করলে সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জবাব দেয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের শিবির থেকে। বিএনপি বলছে কারাগারে সরকার অবহেলা করছে। সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপির নেতারা এখন সবাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বনে গেছেন। কারাগারের চিকিৎসক তাকে নিয়মিত পরীক্ষা-নীরিক্ষা করছেন। তারা বলছেন,খালেদা জিয়া ঠিক আছেন। সুস্থ আছেন। অথচ বিএনপি নেতারা জোর করে খালেদা জিয়াকে অসুস্থ বানিয়ে রাখতে চান।
২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর সর্বশেষ কারাগার থেকে বের হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেসময় টানা ৩৭২ দিন কারাগারে কাটান তিনি। তখন ছিলো সেনা সমর্থিত তত্তাবধায়ক সরকার। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব জেলে আটক করে রাখা হয় তাকে। এরপর পার হয়েছে প্রায় ১০ বছর। আবারও কারাগারে গেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।  গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এরপর থেকেই পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন তিনি। এর আগে খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর মোট চারবার গ্রেফতার হন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিন দফায় গ্রেফতার হন তিনি। 
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এবার নতুন ধরনের রাজনীতি চর্চা শুরু হয়েছে। অতীতে নির্বাচনের অন্তত এক বছর আগে থেকেই আলোচনায় থাকতো আসন্ন নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে। এবার ঘটছে উল্টো। নির্বাচন নিয়ে যত না কথা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি কথা হচ্ছে খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকার বিষয়টি। এতে মূল আলোচনা থেকে অনেকটা সরে গিয়েছে দুই দল। এটা আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী কৌশল বলে মনে করছেন তারা। অন্যদিকে বিএনপিকে ফেলা হয়েছে রাজনৈতিক কৌশলের ঘেরাটোপে। আইনী মারপ্যাচে পড়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় মূলত উভয় সংকটে পড়েছে দলটি। তারা একদিকে চেয়ারপারসনের মুক্তি নিয়ে কথা বলছেন অন্যদিকে নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরছেন। কিন্তু চেয়ারপারসন ছাড়া রাজনীতির মাঠ তারা গরম করতে পারছেন না। দলীয় নেতা-কর্মীরাও তাদের চেয়ারপারসন ছাড়া কোন ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন। এদিকে ঈদের আগে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন খোদ বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা এখন বোঝার চেষ্টা করছেন খালেদা জিয়াকে নিয়ে আওয়ামী লীগের কৌশলটা আসলে কি। কেউ কেউ আশংকা করছেন বিএনপি ইস্যুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার হয়তো মাইনাস ফর্মুলায় জোর দিতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ধরনের ফর্মূলার কথা বরাবরই অস্বীকার করা হচ্ছে। 
তারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন যে মামলায় কারাগারে আছেন সেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা। ওই মামলায় আওয়ামী লীগের কোন হাত নেই। একইভাবে স্বাধীন আদালত তার রায়ে খালেদা জিয়াকে শাস্তি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই।  আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নির্ভর করছে আসলে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তাই খালেদা জিয়ার কারাবাস কতোটা দীর্ঘ হবে তা এইমুহুর্তে বলা কঠিন। এদিকে কারাগারে খালেদা জিয়ার সময় কিভাবে কাটে এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ সবার কৌতূহল রয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে প্রায় সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। মূলত খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্য,দলীয় আইনজীবি ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক দেখা করে আসার পর তাদের কাছ থেকে সংবাদ মাধ্যমগুলো কারাগারে খালেদার দিনলিপি সম্পর্কে জানতে পারছেন। এক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষ একেবারে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। তারা বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে কোন ধরনের তথ্য দিচ্ছেন না।  তাই এসব সূত্র থেকে জানা গেছে, ডিভিশনপ্রাপ্ত কয়েদি হিসেবে কারাগারে আছেন বেগম খালেদা জিয়া। জেলকোড অনুযায়ী সকল সুবিধাও পাচ্ছেন। তার দীর্ঘদিনের গৃহকর্মী ফাতেমা তার সঙ্গেই কারাগারে আছেন। কারাগারের খাবার খুব একটা খান না খালেদা জিয়া। যদিও কারাগারের ভেতরেই তার জন্য রান্না হয়। তারপরও বাইরে থেকে তাকে তার পছন্দের খাবারও এনে দেয়া হয়। নিয়মিত রোযা রাকচেন বলেও বিভিন্ন মাধ্যম জানিয়েছে। সকালে গোসল করেন, পরে জোহরের নামাজ পড়েন। জোহরের নামাজ শেষে তিনি মাঝে মাঝে অজিফা পড়েন। কখনো তিনি ডে-কেয়ার সেন্টারের বারান্দায় পায়চারিও করেন। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর বিটিভি দেখেন। এরপর রাতের খাবার খান। খাবার শেষে আবার কিছু সময় টিভি দেখেন। খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধানের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে গৃহকর্মী ফাতেমা তার সঙ্গে আছেন। তিনি দিনে কর্তব্যরত নারী-কারারক্ষীর কাছে থাকেন। ডাকা হলে তিনি খালেদা জিয়াকে ওষুধ দেয়াসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেন। রাতে ঘুমান খালেদা জিয়ার পাশের কক্ষে। খালেদা জিয়ার সেবায় কারাগারের ভেতরে সার্বক্ষণিক একজন নারী ফার্মাসিস্ট, প্রয়োজন হলে একজন চিকিৎসক থাকেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় খালেদা জিয়ার কক্ষ ঘিরে একজন নারী উপ-কারাধ্যক্ষের নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক চারজন নারী কারারক্ষী থাকেন। কারাগারের বাইরে আছেনএকজন উপকারাধ্যক্ষের নেতৃত্বে একদল কারারক্ষী। খালেদা জিয়া শান্ত ও চুপচাপ থাকেন। কারা কর্মকর্তাদের কাছে তিনি কোনো চাহিদার কথা জানান না। এদিকে কারাকর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন বললেও বিএনপি নেতারা বলছেন তার শারিরীক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক খারাপ হয়েছে। যদিও গত ৭ মার্চ দলের নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর বলেছিলেন খালেদা জিয়ার মনোবল শক্ত আছে। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। কিন্তু এরপর দিন যত গড়াচ্ছে, বিএনপির অভিযোগ ততই বাড়ছে।

 

উপরে