শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ৩ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার ‘হাইব্রিড আক্রমণ’ নিয়ে সতর্কতা জার্মানির ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জনের মৃত্যু নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 29 May, 2018 10:43

এরশাদকে ঘিরে মাহাথির স্বপ্ন !

এরশাদকে ঘিরে মাহাথির স্বপ্ন !
সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ

কাজী আফিফুজ্জামান সোহাগ: রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, এই চিরন্তন বিষয়টা সবচেয়ে বেশি জেঁকে বসেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। বিশেষ করে নির্বাচন এলেই কথাটার তাৎপর্য সবচেয়ে বেশি বোঝা যায়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জামায়াত নয় এ কথাটা মূলত বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে কেন্দ্র করে বেশি উচ্চারিত হয়। অতীত নির্বাচনে দেখা গেছে জোট গড়ার আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই ঝুঁকে পড়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদের দিকে। 
তবে এবার এরশাদকে নিয়ে ভিন্ন ধারায় আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় মাহাথির মোহাম্মদের বিজয়ের পর ইস্যুটি তুলে ধরা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সরকারের অংশীদারিত্বের সঙ্গে থাকা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রিয় নেতারা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ও সভা-সমাবেশে বিষয়টি তুলে ধরছেন। এমনকি নির্দিষ্ট কিছু মিডিয়ায়ও এ নিয়ে কলাম ও নিবন্ধন লিখছেন। এসবের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের আগে দলটির গুরুত্ব আরও বাড়াতে এ ধরনের তৎপরতা বলে মনে করছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা নিউইয়র্ক মেইলকে জানিয়েছেন, আগামীতে এরশাদের গন্তব্য আসলে কোথায় যাবে তা নিয়ে এরইমধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। স্পষ্ট কথায়, ক্ষমতার বাইরে থাকতে চান না সাবেক এই প্রেসিডেন্টে। সেটা আওয়ামী লীগের ছায়াতলে হোক কিংবা বিএনপির ছায়াতলে হোক। ক্ষমতার বাইরে থাকার তিক্ততা সইবার মতো পরিস্থিতি নেই বলে মনে করে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। 
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি ভঙ্গুর দল জাতীয় পার্টি। ক্ষমতার বাইরে থাকলে দলের অস্তিত্ব নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হতে পারে। দলটির নেতৃত্বে এরশাদ থাকলেও দলের অভ্যন্তরে রয়েছে নানা গ্রুপিং ও ধারা। জোটের প্রশ্ন আসলে দলের শীর্ষ নেতাদের একটি অংশ লবিং করেন বিএনপির সঙ্গে জোট করতে। আবার অন্য একটি অংশ লবিং করেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাঁট বাধতে। তবে এরশাদের কাছে দুটো গ্রুপই স্পষ্ট। তিনি জানেন কারা আওয়ামী পন্থী আর কারা বিএনপি পন্থী। জাতীয় পার্টির শীর্ষ কয়েক নেতার সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, রাজনীতির আগামী দিনগুলোর ওপর সতর্ক ও কড়া নজর রাখছেন। পরিস্থিতি বুঝে জোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সরকারের অংশিদারিত্ব থাকায় নীতিগতভাবে সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। রাজনীতির হিসাব-নিকাষে দলের লাভটাই আসলে বড় বিষয়। আরও স্পষ্ট করে বললে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার যদি আগামীতে সরকার গঠনের জন্য সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে তাহলে জাতীয় পার্টি বর্তমান জোটকেই এগিয়ে নেবে। আর যদি বিপরীত চিত্র দেখা যায় তাহলে ১৪ দলীয় জোট থেকে সরে আসার সম্ভাবনা বেশি। সবকিছু নির্ভর করছে নির্বাচন পূর্ববর্তী পরিস্থিতির ওপর। রাজনীতির ঠিক এই হিসাব-নিকাষের মধ্যেই এরশাদকে নিয়ে ভিন্নমাত্রায় আলোচনায় যোগ দিয়েছে জাতীয় পার্টি। কে হতে পারেন বাংলাদেশের মাহাথির এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে নিজেরাই উত্তর দিয়েছেন-এইচএম এরশাদ। নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টিকে আরও গুরুত্বপুর্ন করে তুলতে তাদের এই প্রয়াস বলে মনে করছেন অনেকে। 
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রচার সংখ্যায় শীর্ষ একটি দৈনিকে সাংবাদিক পরিচয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় লিখেছেন, কোনো মাহাথির মোহাম্মদ হঠাৎ করে নাজিল হয় না। তার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হতে পারে অনেক আগে থেকে। মালয়েশিয়ায়ও তাই হয়েছে। অতীত এবং বর্তমান প্রেক্ষিত মিলিয়ে বাংলাদেশের ন্যূনতম সচেতন একজন মানুষের কাছেও যদি জানতে চাওয়া হয় যে, ‘কে হতে পারেন বাংলাদেশের মাহাথির’ নির্দ্বিধায় তার উত্তর আসবে- তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নিজের লেখায় মাহাথিরের সঙ্গে তুলনা করেছেন এইচএম এরশাদের। তিনি লিখেছেন, ড. মাহাথির মোহাম্মদ প্রথম ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৮১ সালে এবং হুসেইন মুহম্মদ ক্ষমতায় এসেছেন ১৯৮২ সালে। অর্থাৎ দুজনের ক্ষমতা গ্রহণ প্রায় সমসাময়িক। তবে ক্ষমতায় আসার পথ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় এসেছেন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। আর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এসেছেন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার মধ্যে এবং দেশের চরম বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য রাষ্ট্রপতির আহ্বানে। এ পথটি সমর্থনযোগ্য না হলেও রাষ্ট্রের স্বার্থ এবং জাতির মঙ্গলের প্রশ্নটি তখন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি-সংস্কারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও তাই করেছেন। ফলে দুটি দেশই সমানতালে এগিয়ে যেতে শুরু করেছে। মাহাথির মোহাম্মদের সুবিধা ছিল, তিনি স্বচ্ছন্দে দেশ পরিচালনা করতে পেরেছেন। তিনি হরতাল-অবরোধ-জ্বালাও- পোড়াওয়ের সম্মুখীন হননি। পক্ষান্তরে এরশাদকে ওইসব উপকরণের সবটাই মোকাবিলা করতে হয়েছে। সুনীল শুভরায লিখেছেন, মাহাথির নির্বাচন দিয়েছেন জনগণের রায় নেয়ার জন্য আর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রথম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। মালয়েশিয়ায় নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করে, সেখানে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয় না। আর বাংলাদেশে নির্বাচন বর্জনের একটা প্রবণতা থাকে। মালয়েশিয়ায় নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটার নিশ্চয়তার থাকে আর এখানে তা থাকে না। তুলনা করে জাতয়ি পার্টিও এই শীর্ষ পর্যায়ের নেতা লিখেছেন, মাহাথির মোহাম্মদ তার দেশের প্রবীণতম রাজনীতিবিদ। তার বয়স এখন ৯২ বছর। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও এখন বাংলাদেশের প্রবীণতম রাজনীতিবিদ। তার বয়স এখন ৮৯ চলছে। শারীরিক সুস্থতার দিক থেকে মাহাথির মোহাম্মদের মতোই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সুস্থ এবং সবল। মাহাথির মোহাম্মদ স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন মোকাবিলা না করে সাংবিধানিক পন্থায় স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। 
মাহাথিরকে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর রাজনৈতিক কারণে জেলে যেতে হয়নি, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে প্রতিহিংসার শিকার হয়ে রাজনৈতিক কারণে জেলে যেতে হয়েছে। মাহাথির মোহাম্মদ রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে দেশের প্রয়োজনে আবার রাজনীতিতে এবং ক্ষমতায়ও এসেছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দেননি। তিনি দেশ ও জাতির জন্য রাজনীতিতে থেকেছেন, এখনো আছেন এবং ক্ষমতায় যাওয়ার প্রত্যাশা করেন। এর আগে বিষয়টি নিয়ে নিবন্ধ লেখেন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী। সেখানে তিনি বলেন, মাহাথির মোহাম্মদের বিজয়ে বাংলাদেশে প্রচ- উল্লসিত হয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার উল্লাসের বিশেষ কারণ হলো- তিনি তার দলের কর্মী, নেতৃবৃন্দ এবং প্রান্তিক জনতাকে জানান দিতে চান- দুই নেত্রীর অপশাসন, দুঃশাসন, একনায়কতান্ত্রিক মানসিকতা ও দুর্নীতির অতল গহ্বর থেকে তিনিও বাংলাদেশকে টেনে তুলতে পারেন। এটি তার ব্যক্তিতগত প্রত্যাশা।

কিন্তু বাংলার সাধারণ মানুষ এমনকি তার নিজ দলের নেতা-কর্মীরাও আদৌ উজ্জীবিত, অনুপ্রাণিত বা উদ্বেলিত নন। কারণ, মাহাথির মোহাম্মদের যে নিষ্কলুষ ভাবমূর্তি মালয়েশিয়াতে সুপ্রতিষ্ঠিত, বাংলাদেশে তা শুধু এরশাদ সাহেবেরই নয়, কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বই মাহাথির মোহাম্মদের মতো এখন নিষ্কলুষ ভাবমূর্তি বহন করেন না। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা জাতীয় পার্টিও চেয়ারম্যানকে মাহাথিরের সঙ্গে তুলনার প্রয়াসকে শিশুসুলভ বলে মনে করছেন। তারা জানান, মালয়েশিয়ার রাজনীতি আর বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটের মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। জাতীয় পার্টির ইস্যুটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সময়ের বিবেচনায় অবাস্তবযোগ্য ও কাল্পনিক, এমনটি মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

উপরে