বাজেটে ধর্মীয় বৈষম্য বাতিলের দাবি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের
প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ধর্মীয় খাতের বিভিন্ন বৈষম্যগুলোর দ্রুত অবসানের দাবি জানিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
পরিষদের নেতারা বলেছেন, চার দশকের বঞ্চনা-বৈষম্যের কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সামাজিক উন্নয়ন ও গবেষণা পরিচালনার জন্য বাজেটে যথাযথ বরাদ্দ রাখতে হবে।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত বাজেটে ধর্মীয় বৈষম্যের অবসান চাই শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
মূল প্রবন্ধে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, বাজেট বরাদ্দ থেকে দেখা যায়, ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদ পরিচালনায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩০ লাখ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪৮ লাখ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ তে ৫৭ লাখ টাকা অর্থাৎ এ পর্যন্ত মোট ২.৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও সে রকম অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় উপাসনালয় পরিচালনার জন্য আগের মতোই কোনোরূপ বরাদ্দ রাখা হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজের মধ্যে ওয়াকফ ও দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিও উল্লেখিত রয়েছে। বাজেট বরাদ্দ থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসন খাতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৮ লাখ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪৮ লাখ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০ লাখ, ২০১৬-১৭ তে ৫৫ লাখ অর্থাৎ মোট ২.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অথচ দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আগের মতোই বাজেটে কোনো বরাদ্দ নেই।
তিনি বলেন, বিগত দশকগুলোর প্রতি অর্থবছরের বাজেটের মতোই ইসলামিক মিশন প্রতিষ্ঠান খাতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৬.৫৬ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৮.০১ কোটি ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৮.৯০ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ তে ২১.৫৮ এবং ২০১৭-১৮ তে ২২.২৪ কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অথচ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সামাজিক উন্নয়ন, গবেষণা পরিচালনার জন্যে আলাদাভাবে কোনো বরাদ্দ নেই।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, এতক্ষণ আমরা আপনাদের সামনে খাতওয়ারি বাজেট বৈষম্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বিগত কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনায় মাথাপিছু বরাদ্দের চিত্রটি আরও করুণ এবং দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশের সরকারি লোকগণনার পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে দেখা যায় প্রকল্প বাদে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুযায়ী ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর মাথাপিছু বরাদ্দ যে ক্ষেত্রে প্রায় ১১ হতে ১২ টাকা, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মাথাপিছু বরাদ্দ সে ক্ষেত্রে মাত্র ৩ টাকা। যদিও সংবিধানের অঙ্গীকার অনুযায়ী ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিককে সমভাবে দেখতে রাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনসংখ্যার ব্যাপক অংশ হিসেবে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় অবশ্যই মোট বরাদ্দের বৃহত্তর অংশ পাবে কিন্তু মাথাপিছু বরাদ্দের ক্ষেত্রে কেন বৈষম্য হবে।
আলোচনাসভা থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়- হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টগুলোকে ফাউন্ডেশনে রূপান্তরিত করে সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্যে উন্নয়নের কার্যক্রমকে অধিকতর সম্প্রসারিত করা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটের বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান বৈষম্যগুলোর অনতিবিলম্বে অবসান করাসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়।