নির্যাতনের বিচার ও নাগরিকত্ব চায় রোহিঙ্গারা
‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদের অত্যাচার, নির্যাতন ও জুলুম করেছে। যার কারণে প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। এখন এই অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতনের বিচার ও নাগরিকত্ব নিয়ে মিয়ানমারে ফিরতে চাই।’
সোমবার দুপুরে উখিয়ার কুতুপালংস্থ টিভিস্টেশন কেন্দ্রের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা মৌলভী ফরিদ (৪২) এভাবে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের কাছে বিচার দাবি করছিলেন।
শুধু মৌলভী ফরিদ নয়, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার রোহিঙ্গার মুখে একই দাবি, ‘নির্যাতনের বিচার চাই, নাগরিকত্ব নিয়ে মিয়ানমারে ফিরতে চাই।’
সোমবার সকাল ৯টায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। এরপর তারা গাড়িযোগে কলাতলীস্থ হোটেল সায়মনে যান। সেখানে ঘণ্টাব্যাপী তাদেরকে ব্রিফ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। এরপর বেলা ১১টায় গাড়িযোগে উখিয়ার কুতুপালংস্থ ট্রানজিট ক্যাম্পে পৌঁছান। সেখানে মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া নতুন রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ করেন এবং নির্যাতনের বর্ণনা শুনেন।
সেখানে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থানের পর ট্রানজিট থেকে বের হওয়ার সময় কুতুপালংস্থ টিভিস্টেশন কেন্দ্রের রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নেন। রোহিঙ্গাদের অবস্থান দেখে জাতিসংঘের মহাসচিব গাড়ি থেকে নেমে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। এ ছাড়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ করেন এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা শুনেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে কথা বলা রোহিঙ্গা শফি উল্লাহ (৪৮) বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব হাসিমুখে আমাদের সাথে কথা বলেছেন। আমরা তার কাছে নাগরিকত্ব দাবি করেছি। তিনি হাসিমুখে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, সুন্দর করে ক্যাম্পে বসবাস করো। আমরা দ্রুত যতটুকু করার তা চেষ্টা করছি।’
আরেক রোহিঙ্গা আয়াতুল উল্লাহ (৪০) বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের মহাসচিবকে অভিযোগ করে বলেছি, আমরা দেশহীন মানুষ। মিয়ানমারে বসবাস করতাম। কিন্তু মিয়ানমার বাহিনীর নির্যাতনে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। এখন নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই, নাগরিকত্ব চাই। এটাই আমাদের একমাত্র দাবি।’
রোহিঙ্গা মৌলভী কাইয়ুম (৫০) বলেন, ‘আমাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। কোন দেশের নাগরিক তারও কোনো পরিচয় নেই। এখন আপনারাই আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দিন। নিজ দেশে স্বাধীনভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিন।’
এরপর গুতেরেস ও জিম কুতুপালং ক্যাম্পের ডি-৪ ও ডি-৫ ব্লকে যান। সেখানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে কুতুপালং এক্সটেনশন ক্যাম্পের ডি-৫ ব্লকে সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে গুতেরেস ও জিমের। বিকেলে তারা ঢাকায় ফিরবেন বলে শিডিউল রয়েছে। এ ছাড়াও এই সংক্ষিপ্ত সফরে কক্সবাজারে বৈশ্বিক সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরবেন অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও জিম ইয়ং কিম।
জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট আলাদা ফ্লাইটে ঢাকা এলেও তারা বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে এক সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন।
এর আগে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান থাকাকালীন ২০০৮ সালের ২৭ মে গুতেরেস কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছিলেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম সফর। তবে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম দুই বছর আগেই একবার বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন।
এর আগে দুদিনের সফরে শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। আর তিন দিনের সফরে শনিবার বিকেলে ঢাকায় আসেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।