সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ নির্দেশনা
স্বল্পসময়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্ত্তৃপক্ষকে কিছু বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলমান অবস্থায় গাড়ির দরজা বন্ধ রাখতে হবে। স্টপেজ ছাড়া যেখানে সেখানে গাড়ি থামানো যাবে না।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট’ এর এক সভায় ‘ঢাকা শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনার পর এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মোঃ নজিবুর রহমান। সভায় অটো সিগন্যাল এবং রিমোট কন্ট্রোলড অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগনালিং পদ্ধতি চালু করারও সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, গণপরিবহনে (বিশেষ করে বাস) দৃশ্যমান দু’টি স্থানে চালক এবং হেলপারের ছবিসহ নাম এবং চালকের লাইসেন্স নম্বর, মোবাইল নম্বর প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সকল মোটর সাইকেল ব্যবহারকারীকে (সর্বোচ্চ দুইজন আরোহী) বাধ্যতামূলক হেলমেট পরিধানের ব্যবস্থা গ্রহণ ও সিগন্যালসহ ট্রাফিক আইন মানার জন্য বাধ্য করতে হবে।
সভায় সব সড়কে বিশেষত মহাসড়কে চলমান সব পরিবহণে (দূরপাল্লার বাসে) চালক এবং যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহার ও পরিবহন কোম্পানিগুলোকে সিট বেল্ট সংযোজনের নির্দেশনা প্রদান করে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পরিবহন ব্যবস্থাপনার এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য আগামী ২০ আগস্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বিআরটিএ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয় , ঢাকা শহরের সড়কে যে সকল স্থানে ফুট ওভার ব্রিজ বা আন্ডার পাস রয়েছে সে সকল স্থানের উভয় পাশে একশ’ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রয়োজনে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিককে ‘ধন্যবাদ’ কিংবা ‘প্রশংসাসূচক’ সম্বোধনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এছাড়া ফুট ওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাসসমূহের প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আন্ডার পাসসমূহে প্রয়োজনীয় লাইট, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা যাতে নাগরিকরা স্বচ্ছন্দে এবং নিরাপদে স্থাপনাসমূহ ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হন তার জন্য ব্যবস্থা নিতে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সভায় ঢাকা শহরের সকল সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও রোড সাইন দৃশ্যমান করা, ফুটপাত হকার মুক্ত রাখা, অবৈধ পার্কিং এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করাসহ সকল সড়কের নামফলক দৃশ্যমান স্থানে সংযোজন করার সিদ্ধান্তও হয়।
ট্রাফিক সপ্তাহের চলমান সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত যথাসম্ভব অব্যাহত রাখা, স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ঢাকা শহরে রিমোট কন্ট্রোলড অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগনালিং পদ্ধতি চালুকরণসহ সব সড়কের ডিভাইডার উচ্চতা বৃদ্ধি করে বা স্থানের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার ব্যাপারে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া মহাখালী ফ্লাইওভার-এর পর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত (আপ এবং ডাউন) ন্যূনতম দুটি স্থানে স্থায়ী মোবাইল কোর্ট, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং প্রতিনিয়ত দৈব চয়নের ভিত্তিতে যানবাহনের ফিটনেস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করা ও শহরের জন্য সকল স্থানেও প্রয়োজন অনুযায়ী অস্থায়ী অনুরূপ কাজের জন্য মোবাইল কোর্ট, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় বলা হয়, ঢাকা শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সমন্বয় করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি বা আরম্ভ হওয়ার প্রাক্কালে অপেক্ষাকৃত বয়ঃজ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, স্কাউট এবং বিএনসিসি’র সহযোগিতা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। পরিবহনের ফিটনেস এবং লাইসেন্স প্রসঙ্গে বলা হয়, অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ফিটনেস প্রদান প্রক্রিয়াতে অবশ্যই পরিবহন দর্শনপূর্বক ফলপ্রসু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া রুট পারমটি/ফিটনেস বিহীন যানবাহন সমূহকে দ্রুত ধ্বংস করার সম্ভাব্যতা যাচাই ও লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে।