ভিনদেশে শান্তিতে ঈদ করল রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো একযোগে আশ্রিত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা ঈদ-উল-আজহা উদযাপন করেছেন।
জীবনের প্রথমবার অপরিচিত স্থানে আনন্দ-বেদনার মধ্য দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কুরবানির ঈদ পালন করেছেন তারা। তাদের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেয়া হয়েছে কুরবানির পশুর মাংস।
প্রতি পরিবারে দুই থেকে তিন কেজি করে কুরবানি পশুর মাংস বিতরণ করা হয়। অনেক পরিবার পশুর মাংস না পাওয়ারও অভিযোগ করেছেন।
এদিকে বড়রা যেনতেন ভাবে ঈদ উপভোগ করলেও কোমলমতি শিশুরা অনাবিল আনন্দে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদ উপভোগ করছে।
জানা গেছে, একযোগে বিদেশে ও অপরিচিত স্থানে ঈদ-উল-আজহা উদযাপন করেছেন রোহিঙ্গারা। গত বছরের এ সময়ে সহায়-সম্পদ ছেড়ে নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে এদেশে। এই ঈদে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আশ্রিত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের দেয়া হয়েছে কুরবানির পশুর মাংস। এতে রোহিঙ্গারা মহাখুশি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঈদের প্রথম দিন প্রায় তিন হাজার গরু-ছাগল জবাই করে মাংস বিতরণ করা হয়। তবে রোহিঙ্গারা এখানে সাহায্য সহানুভূতি পেলেও ভুলতে পারেননি জন্মভূমির কথা।
গত বছরের ২৪ আগস্টের পরদিন থেকে রোহিঙ্গারা কাটিয়েছেন বন, জঙ্গল, পাহাড় পর্বত, নাফ নদী ও নালায়। এই সময়ে তারা অনেক স্বজনদের হারিয়েছেন। নির্যাতন জুলুম ও অত্যাচারের পাশাপাশি বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেই তুলনায় এবারের ঈদ অনেক আনন্দের হয়েছে বলেও জানালেন তারা।
এদিকে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনাবিল আনন্দে ঈদ উপভোগ করছে। নাগরদোলা ও রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে মেলার আয়োজন করে স্থানীয় কিছু মানুষ। নতুন জামা পড়ে সেইখানে ঈদের দিন সকাল থেকে আনন্দে মেতে ওঠে রোহিঙ্গা শিশু কিশোররা।
ছকিনা নামের এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, গত বছরের এই সময়ের নৃশংসতা এখনও ভুলতে পারেনি। তবে এখানে এসে সরকারি ও বেসরকারিভাবে অনেক সাহায্য-সহযোগিতাসহ কুরবানির মাংসও পাওয়া গেছে। এতে আনন্দে আত্মহারা তারা।
উখিয়া উপজেলার জামতলী বি ব্লকের মাঝি রহিম উল্লাহ জানান, গত বছরের এই দিনে মিয়ানমার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নৃশংসতায় পালিয়ে এপারে আসতে গিয়ে ঈদ-উল-আজহা উদযাপন করতে হয়েছে পাহাড়-পর্বতে। না খেয়ে নামাজ পড়েছি। এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে ঈদ-উল-আজহা পালন করতে পেরে ভালো লেগেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে কুরবানির পশুর মাংস বিতরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কতিপয় এনজিও নানা করণে পশু না দেয়ায় চাহিদা মতো কুরবানির মাংস বণ্টন করা সম্ভব হয়নি। সেইসঙ্গে স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝেও কুরবানির পশুর মাংস বিতরণ করা হয়েছে।