শিরোনাম
পাকিস্তানের কাছে ৪.৩২ বিলিয়ন ডলার ন্যায্য হিস্যা চাইলো বাংলাদেশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অধিকার হারাতে পারে হার্ভার্ড গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত ট্রান্সজেন্ডাররা নয়, শুধু জন্মগত নারীরাই নারী: ব্রিটিশ আদালতের রায় ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদে উত্তাল কলকাতা দক্ষিণী নির্মাতার হাত ধরে খলনায়ক হয়ে ফিরছেন শাহরুখ ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ডোমিনিকায় নাইটক্লাবের ছাদ ধসে নিহত বেড়ে ৯৮ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 25 August, 2018 18:49

রোহিঙ্গা সংকটের এক বছর, এখনও অনিশ্চিত প্রত্যাবর্তন

রোহিঙ্গা সংকটের এক বছর, এখনও অনিশ্চিত প্রত্যাবর্তন
সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার :

‘আমার ছেলে বউকে যখন খোঁজে পায়নি তখন তার মাথা খারাপ হয়ে যায়। তখন মিয়ানমার বাহিনীর পিছু ছুটতে থাকে। এক পর্যায়ে মিয়ানমার বাহিনী তাকে গুলি করতে থাকে। মনে হয়; একশোর অধিক তাকে গুলি করেছে। যা লুকিয়ে দেখতে হয়েছে আমার। পরে প্রাণ বাঁচাতে নাতিদের নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসি। ছেলের মৃতদেহও দেখতে পায়নি আর ছেলের বউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এভাবে কান্না করতে করতে ৬৫ বছরের বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম তার ছেলে হারানোর কথা বলছিলেন।

বর্তমানে নুর নবী (১৪), রুজিনা (১২), ইউসুফ নবী (১০) ও মো: নবী (৭) এই নাতি-নাতনী নিয়ে পালিয়ে আসা আনোয়ারা বেগম আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে। ঘটনার এক বছর পার হলেও কোনভাবেই ভুলতে পারছেন না ছেলেকে গুলি করে হত্যার ঘটনা। 

শুধু আনোয়ারা বেগম নন, একই অবস্থা তার পাশের ঝুঁপড়িতে থাকা হাসিনা বেগমেরও। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে তার স্বামী। এখন বৃদ্ধা মা ও দুই শিশু কন্যা নিয়ে রয়েছেন আতংকে।

হাসিনা বেগম বলেন, স্বামীকে মিয়ানমারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ৩ ও ৫ বছরের দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়ে আছি। এখানে তো বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার খাদ্য সামগ্রী দিয়ে কোন রকম বেঁছে আছি। কিন্তু যখন মিয়ানমারে ফিরে যাবো তখন ওখানে কি খেয়ে বৃদ্ধা মা ও সন্তানদের বাঁচবো।

গত বছরের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমার সেনা বাহিনীর নির্যাতনে অনেক রোহিঙ্গা হারিয়েছে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী কিংবা ছেলে-মেয়ে। এ ঘটনার এক বছর পার হলেও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা তাদের স্বজন হারার শোক কোনভাবেই ভুলতে পারছেন না। স্বজনদের দাবি, এসব হত্যাকান্ডের জন্য মিয়ানমার বাহিনীকে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা হোক। 

জেলার উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া স্বজনহারা জোরপূবর্ক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অনেকেরই অবস্থা এ রকম। তারা চান এসব হত্যাকান্ডের বিচার।

মা-বাবা দু’জনই হারানো রোহিঙ্গা শিশু নুর নবী (১৪) বলেন, চোখের সামনে বাবা কে হত্যা করার দৃশ্য দেখেছি। মাকেও খোঁজে পায়নি। এখন মাঝে মাঝে ঘুমে এসব দেখলে কান্নায় বুক ফেটে যায়। ঘুমও আসে না। যতদিন না আমার মা-বাবার হত্যাকারীর বিচার হবে না ততদিনই আমার কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।

ভাই হারানো রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ছুরুত আলম (৩৭) বলেন, বাংলাদেশ সরকার আমাদের সাহায্য করছে। কিন্তু এসবে আমাদের পেট ভরছে না। এখন চাই; যারা আমাদের মা-বোনদের নির্যাতন ও হত্যা করেছে তাদেরকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের আওতায় আনা হোক। 

এদিকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, স্বজনহারা এসব জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত  রোহিঙ্গাদের শোক কাটিয়ে ওঠা সহজে সম্ভব নয়। তারপরও সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় তাদের দুঃখ-যন্ত্রণা কাটিয়ে ওঠানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। 

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয় কমিটি আইএসসিজি’র দেয়া তথ্য মতে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৭ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে স্বজনহারা রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার। 

উপরে