শিরোনাম
পাকিস্তানের কাছে ৪.৩২ বিলিয়ন ডলার ন্যায্য হিস্যা চাইলো বাংলাদেশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অধিকার হারাতে পারে হার্ভার্ড গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত ট্রান্সজেন্ডাররা নয়, শুধু জন্মগত নারীরাই নারী: ব্রিটিশ আদালতের রায় ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদে উত্তাল কলকাতা দক্ষিণী নির্মাতার হাত ধরে খলনায়ক হয়ে ফিরছেন শাহরুখ ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ডোমিনিকায় নাইটক্লাবের ছাদ ধসে নিহত বেড়ে ৯৮ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 5 September, 2018 20:23
ধারাবাহিক প্রতিবেদন: দ্বিতীয় পর্ব

ঝুঁকিপুর্ণ আপারেশনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ

ঝুঁকিপুর্ণ আপারেশনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ

দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বমঞ্চে এখন সরব পদচারনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর। আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক হয়ে তারা কাজ করছেন। বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনছেন গৌরব ও সম্মান। শান্তি ও মানবতা রক্ষায় লাল-সবুজের পতাকাকে তুলে ধরছেন স্ব-মহিমায়। সম্প্রতি মানবজমিনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কাজী মুহা: আফিফুজ্জামান (কাজী সোহাগ) সেনাবাহিনীর একটি উচ্চ পদস্থ টিমের সঙ্গে গিয়েছিলেন মধ্য আফ্রিকায়। সেখানে সরেজমিনে দেখেছেন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের কার্যক্রম। নিউইয়র্ক মেইলের জন্য তিনি লিখেছেন ১০ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ পড়ুন এর দ্বিতীয় পর্ব।

 

মধ্য আফ্রিকার দূর্গম অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আধূনিক মারণাস্ত্র নিয়ে সক্রিয় রয়েছে প্রায় ১০টি দূর্ধর্ষ বাহিনী। সংখ্যায় তারা প্রায় ৯ হাজার। এদের মধ্যে এন্টি বালাকা আর এক্স সেলেকা সবচেয়ে বেশি দূর্ধর্ষ। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে রয়েছে-এম-১৬, আরপিজি, এইচএমজি ও কানাশনিকভ এর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র।

প্রতিনিয়ত এদের সঙ্গে লড়েই মধ্য আফ্রিকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীরা। বিশ্বের ২১টি দেশের ২৭টি কন্টিনজেন্ট কাজ করছে মধ্য আফ্রিকায়। মাত্র ৩টি কন্টিনজেন্ট নিয়ে শান্তি রক্ষায় কাজ করছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স আলাদা মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ১৫০ সদস্যের এ কন্টিনজেন্ট স্থানীয়দের কাছে ব্যানএসএফ নামে সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও ব্যানএসএফকে দেয়া হচ্ছে আলাদা ধরনের গুরুত্ব ও মর্যাদা। এর অন্যতম কারন এ পর্যন্ত এন্টি বলাকা ও এক্স সেলেকার বিরুদ্ধে ব্যানএসএফ যে কয়টি অপারেশন পরিচালনা করেছে তার সবগুলো সফল হয়েছে। এজন্য মধ্য আফ্রিকায় জাতিসংঘের কোন ডেলিগেশন টিম আসলে তাদের নিরাপত্তা দিতে হয় ব্যানএসএফকে।

মজার বিষয়, দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গেলে তাদেরও নিরাপত্তা দিতে হয় বাংলাদেশী অকুতোভয় সেনাসদস্যদের। গত বছরের মে মাস থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মধ্য আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে ১৩টি অপারেশন পরিচালনা করেছে ব্যানএসএফ। এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হচ্ছে অপারেশন টোকিও-১ ও ২, অপারেশন রিভার সাইট, অপারেশন পিকে-ফাইভ, অপারেশন বাকুমা, অপারেশন ইয়োঙ্গফুঙ্গ ও অপারেশন সুকুলা।

এসব অপারেশনে সন্ত্রাসী বাহিনীর বেশ কয়েক সদস্য নিহত হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমানের অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য সামগ্রী। সবচেয়ে বড় কথা স্থানীয়দের কাছে ত্রাস হিসেবে পরিচিত এসব বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে স্থানীয়দের মন জয় করতে পেরেছে। পাশাপাশি আস্থা অর্জন করেছে শান্তিরক্ষী পরিচালনাকারী জাতিসংঘের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মধ্য আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আতংক ছড়িয়ে অবস্থান করছে এন্টি বলাকা ও এক্স সেলেকা। মধ্য আফ্রিকার বোফারগিলা, বোসানগোয়া, বোগাংগোনো, বেরবেরাতি ও এমবাইগি জুড়ে রয়েছে এন্টি বলাকার একছত্র আধিপত্য। অন্যদিকে বুয়ার, এনগারবো, এনজেনে, বিরাও, ব্রিয়া ও বাম্বারাতে রয়েছে এক্স সেলেকা।

সম্প্রতি বাম্বারাতে এক্স সেলেকার ২৫০ জনের মতো সদস্যকে হত্যা করে আধিপত্য নিয়েছে এন্টি বলাকা। অন্যদিকে বাংগামু ও ব্রিয়াতে রয়েছে অপর সন্ত্রসী সংগঠন এলআরএ। গত ৩০ বছর ধরে জাতিসংঘ এখানে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছে। কিন্তু শিক্ষার আলোহীন এই মানুষগুলোর কোন পরিবর্তন আসেনি। মুসলমান ও খ্রীস্টানদের মধ্যে হানাহানি নৈমিত্তিক ব্যাপার। দেশটিতে খ্রিস্টানরা সংখ্যালঘু হলেও ২০১৩ সালে সেলেকা নামে মুসলিম বিদ্রোহীদের কয়েকটি গ্রুপ ক্ষমতা দখল করে। ফলে ফ্রান্সের কাছ থেকে ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে যে অস্থিরতা চলছিল তা রূপ নেয় সংঘাতে। আন্তর্জাতিক চাপে ২০১৪ সালে সেলেকা একটি অন্তর্র্বতী সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেও মাসের পর মাস সংঘাত চলতেই থাকে।

সংশিষ্টরা জানান, আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এ দুটি সংগঠনের বিরুদ্ধে যখনই বড় ধরনের অপারেশন করতে হয়েছে তখনই ডাক পড়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকষ কন্টিনজেন্ট ব্যানএসএফ এর। অন্যান্য দেশের শান্তিরক্ষীরা থাকলেও বড় অপারেশনে মূল ভরসা বাংলাদেশের ব্যানএসএফ। এ ধরনের অপারেশনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশ। গত তিন বছর ধরে ১৫০ সদস্যের এ কন্টিনজেন্ট কাজ করছে সুনামের সঙ্গে।

দূর্গম অঞ্চলে দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অপারেশনের সফলতা প্রসঙ্গে মধ্য আফ্রিকায় কাজ করা স্পেশাল ফোর্সের কয়েক সদস্য বলেন, এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর উচ্চ মানের প্রশিক্ষন সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে। আর প্রতিটি অপারেশনের সময় মাথায় থাকে আমরা দেশের জন্য কাজ করছি। শান্তিপ্রিয় স্থানীয় মানুষ আর জাতিসংঘ আমাদের ওপর শতভাগ আস্থা রেখেছে। এটা কোনভাবেই উপেক্ষা করতে পারি না।

তারা জানান, অপারেশনের সময় আমাদের আরেকটা চিন্তা থাকে তাহলো-আমাদের সফলতার ওপরই নির্ভর করে দেশের সুনাম। আমরা ব্যর্থ হওয়া মানে বাংলাদেশকে ব্যর্থ করা। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়েই মূলত কাজ করি। তারা জানান, সংখ্যা ও অস্ত্রশস্ত্রে তারা আমাদের তুলনায় অনেক এগিয়ে। কিন্তু আমাদের প্রফেশনালিজমের কাছে তারা পেরে ওঠে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকস সদস্যরা সর্বশেষ বড় ধরনের অপারেশন করে ৮ এপ্রিল। ওইদিন রাত ২টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত টানা ৮ ঘন্টা অপারেশন পরিচালনা করা হয়। এতে এসএমজি, পিস্তলসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের স্পেশাল ফোর্সকে মুলত অন্যান্যরা শক্তি হিসেবে মনে করে। ব্যানএসএফ ছাড়া বড় ধরনের কোন অপারেশন শুরু করা হয় না। সম্প্রতি একটি অপারেশনের জন্য সবকিছু প্রস্তুত ছিলো। কিন্তু অপারেশন শুরু করা হয়নি। কারন বাংলাদেশের একটি এপিসি মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়ে গেলে সেখানে সময়মতো পৌঁছাতে পারেনি।

তারা জানান, এসব বাংলাদেশকে অর্জন করে নিতে হয়েছে। পেশাগত দক্ষতা আর কাজের প্রতি একাগ্রতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থানকে এখানে সুসংহত করেছে। জাতিগত বিরোধকে কেন্দ্র করে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পরবর্তীতে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় জাতিসংঘ এখানে ২০১৪ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে শান্তি রক্ষা মিশন চালু করে। শান্তিমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তি রক্ষীরা দেশটিতে কাজ শুরুর পর তাদের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে এ দেশের সরকার এবং জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে।

উপরে