চার বছর সংস্কারের পর ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’ এর যাত্রা শুরু
সাবেক হোটেল রূপসী বাংলা এখন ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর শাহবাগে ১৯৬৬ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টালের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল দেশের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেলের যাত্রা। যা ৮৩ সাল পর্যন্ত চলে। পরবর্তীতে স্টারউড কোম্পানির সঙ্গে সরকারের চুক্তি হওয়ায় এটি ঢাকা শেরাটন হোটেল নামে চলে ২০১১ সাল পর্যন্ত।
২০১৪ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টালের সঙ্গে চুক্তির আগ পর্যন্ত তিন বছর হোটেলটি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘রূপসী বাংলা হোটেল’ নামে পরিচালিত হয়। আর এই নামটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পছন্দ করেই দিয়েছিলেন।
১৯৬৬ সাল থেকে ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টালের ব্যবসা শুরু ধরা হলে এদেশে তাদের ব্যবসা ৫৩ বছর হতে চলেছে।
গত চার বছরে হোটেলটিতে সংস্কারে ব্যয় হয়েছে ৬২০ কোটি টাকা।
২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চার বছর সংস্কার কাজ চলে। বিশ্বমানের অতিথি সেবা নিশ্চিত করতে এসময় হোটেলে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। রূপসী বাংলা হোটেলে কক্ষ ছিল ছোট-বড় মিলিয়ে ২৭২টি। সংস্কারের পর করে সংখ্যা কমে ২৩১ টিতে দাঁড়িয়েছে। আয়তনের দিক থেকে কক্ষের আকার দাঁড়িয়েছে ২৬ থেকে ৪০ স্কয়ার মিটার।
এর আগে হোটেলটির হলরুম ছিল একদিকে, উইন্টার গার্ডেন নামে সবচেয়ে বড় হলরুমের অবস্থান ছিল আরেক দিকে। এখন দুটি এক করে দেয়া হয়েছে। হোটেলটির মূল ফটকও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ভেতরের সুইমিং পুলটিও স্থানান্তর করে সাজানো হয়েছে নতুন করে।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এলে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে- প্রধানমন্ত্রী: হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’য় এলে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হোটেলটি উদ্বোধনের সময় একথা জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সঙ্গে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এটিই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার সাক্ষী এই হোটেল।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে জাতির পিতা যার যা কিছু আছে তা নিয়ে যখন শত্রুর মোকাবেলা করতে প্রস্তুত হতে নির্দেশ দেন, তখন থেকে এখানে সাংবাদিকদের আনাগোনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার যে নির্দেশ দেন তা ইপিআর’র (বর্তমান বিজিবি) ওয়্যারলেস সেট দিয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সারা বাংলাদেশে পৌঁছে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে বার্তাটা ধরা পড়ে। তারা রাতে আমাদের বাসা আক্রমণ করে এবং জাতির পিতাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। চারজন ইপিআর সদস্য বার্তাটি পৌঁছে দেয়ায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৎকালীন এই হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যে বিদেশি সাংবাদিকরা ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অ্যাকশনে যাওয়ার আগে তাদের হোটেলে আটক করে ফেলে। আর বের হতে দেয়নি। সায়মন ড্রিং তখন অল্প বয়সী ছিলেন। লুকিয়ে হোটেলের কিচেন দিয়ে কর্মচারীদের সহযোগিতায় বেরিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, সায়মন ড্রিং-ই প্রথম সাংবাদিক যিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ঢাকার রাজপথের লাশের ছবি তুলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। কাজেই এই হোটেলের সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িত।
সেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল, পরে শেরাটন এবং সেখান থেকে রূপসী বাংলা নাম ধারণ করে চার বছরের সংস্কার ও আধুনিকায়নের পর আবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬০ বছরের পুরনো ভবন সংস্কারের মাধ্যমে নতুন রূপে সেজেছে পাঁচতারকা এই হোটেল।