কোটার দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত
দেশব্যাপী সোমবার বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা। প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষও বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় নেমে আসেন। তারাও তাদের কোটা বহাল রাখার দাবি জানান। এদিকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকার অবরোধ কর্মসূচি ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য সব ধরনের সরকারি চাকরিতে প্রিলিমিনারি থেকে ৩০ শতাংশ কোটা বহাল, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ ভাগ কোটা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫ ভাগ কোটার দাবিতে আন্দোলন করছেন সংশ্লিষ্টরা। শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সোমবার দাবি আদায়ে পৃথক কর্মসূচি পালন করেন তারা। তবে বেলা ৩টা থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধের কথা থাকলেও লোক সমাগমের অভাবে তা করতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধা কোটার দাবিতে আন্দোলনরতদের ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’। সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হলেও আন্দোলনকারীদের দুটি পক্ষকে পৃথকভাবে বসতে দেখা গেছে।
শাহবাগ মোড় অবরোধ কর্মসূচিতে সোমবার সন্ধ্যায় এসে একাত্মতা ঘোষণা করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এ সময় তিনি আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন এবং এ আন্দোলনকে সচল রাখতে সব জায়গায় কমিটি গঠনেরও পরামর্শ দেন। ১৪ অক্টোবর সেগুনবাগিচার স্বাধীনতা হলে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান শাজাহান খান।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ‘মুক্তিযুদ্ধ চেতনা সমন্বয় পরিষদ’ গঠন করেন। এর আহ্বায়ক করা হয় মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খানকে। এ সময় ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন নবগঠিত পরিষদকে কর্মসূচি ঘোষণার আহ্বান জানান। পরিষদের সদস্য সচিব ওসমান আলী ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন। পরে সবার অনুরোধক্রমে মন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলেন।
সভাপতির বক্তৃতায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন সচল রাখতে সব জেলা ও বিভাগে কমিটি গঠন করা হবে। এ সময় তিনি কর্মসূচি স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কী কী করা দরকার তা ঠিক করেছি। আমাদের সবাইকে ঘোষিত ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে হবে। এমনভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, যেন বাংলার মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধীদের ঠাঁই না হয়। প্রত্যেক বিভাগ-জেলা-উপজেলায় আন্দোলন গড়ে তুলে স্বাধীনতাবিরোধীদের বীজ নির্মূল করতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধীদের চাকরি দেয়া যাবে না। তাদেরকে চাকরি দেয়া হলে পাকিস্তানি চেতনা বাস্তবায়ন করবে।
৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা বহালের দাবি : প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে ‘বাংলাদেশ আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ’। কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের আরও পিছিয়ে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা। সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আদিবাসী কোটা বাতিল ও কোটা বহালের দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক উইলিয়াম নকরেক।
উইলিয়াম নকরেক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চেয়েছে, কোটা বাতিল নয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ৯ অক্টোবর সারা দেশে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ কর্মসূচি করবে, ১০ অক্টোবর দেশব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ ও ১৩ অক্টোবর শাহবাগে প্রতিবাদ গান ও সংহতি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় তারা। এ ছাড়া ৫ শতাংশ কোটা বহালের দাবিতে সোমবার বিকালে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ।
কর্মসূচি ডেকে মাঠে নেই ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’: কর্মসূচি শিথিল করেও লোকসমাগমের অভাবে বেলা ৩টা থেকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে পারেনি আন্দোলনকারীরা। অথচ তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ঘোষিত সময়ের ৩ ঘণ্টা পর মাত্র ৫০-৬০ জন নিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে তারা। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এ সময় শাহবাগে পুলিশ থাকলেও তাদের নির্বিকার ভূমিকায় দেখা গেছে। এদিকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হলেও আন্দোলনকারীদের দুটি পক্ষকে পৃথকভাবে বসতে দেখা গেছে। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ ব্যানারে একটি গ্রুপ টিএসসি থেকে শাহবাগ যাওয়ার সড়কে জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেয় ও আরেকটি পক্ষ ‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় পরিষদ’-এর ব্যানারে শাহবাগ মোড়ের মূল চত্বরে অবস্থান নেয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার রাত থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আসছে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’। এর মধ্যে কয়েক দফায় স্থগিত কর্মসূচি শিথিল ও স্থগিত রাখে তারা। কোটা বাতিলের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পোষ্যদের কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ গঠিত হয়।
আন্দোলনের বিষয়ে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’-এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নয়ন বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমাদের আন্দোলন চলবে।
কর্মসূচিতে শৈথিল্য আনায় তারা নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পর অবরোধে গিয়েছেন, তবে ৩টা থেকেই শাহবাগে তাদের অবস্থান ছিল বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে ৫ শতাংশ কোটার দাবিতে বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেয় প্রতিবন্ধীরা ও প্রতিবন্ধীদের কয়েকটি সংগঠন। তারা জাদুঘরের সামনের সড়ক অবরোধ করে। ফলে এ রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবস্থান কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বহালের দাবি জানানো হয়।
এদিকে শাহবাগ অবরোধের জন্য স্থানটির এক পাশ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে বাসগুলো হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে দিয়ে ঘুরে যাচ্ছে। তবে শাহবাগ মোড়ের মূল চত্বরের আশপাশ দিয়ে কিছু যান চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে অবরোধের ফলে এ এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও। তবে পুলিশকে এ সময় নির্বিকার ভূমিকায় দেখা গেছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। তাদেরকে শাহবাগ মোড় ছাড়ার অনুরোধ করছি। তবে এর বেশি কথা বলতে রাজি হননি তিনি।