আ’লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের খসড়া চূড়ান্ত
নির্বাচনী ইশতেহারের খসড়া তৈরির কাজ শেষ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এটি অনুমোদনের জন্য ১১ নভেম্বর দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হবে।
অনুমোদন হলে তফসিলের পর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বা রাজধানীর কোনো পাঁচ তারকা হোটেল আনুষ্ঠানিকভাবে তা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ইশতেহার তুলে ধরবেন।
ইশতেহার তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত এবং দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এবারের ইশতেহারে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত বিষয়গুলোর অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে একশ’ বছর মেয়াদি ‘ডেল্টা প্ল্যান’।
এছাড়া ইশতেহারে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে- ‘বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে।’ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ইশতেহাবের প্রাধান্য পেয়েছে সমুদ্র।
প্রকৃতি ও পরিবেশ ঠিক রেখে সমুদ্র সম্পদ আগামীতে হয়ে উঠতে পারে অর্থনীতির মূল ভিত্তি। এ সম্পদকে কীভাবে কাজে লাগানো যাবে- তার বিস্তারিত থাকছে ইশতেহারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ যুগান্তরকে বলেন, তফসিলে খসড়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তফসিলের পরে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হবে সেখানে ইশতেহার অনুমোদন করা হবে।
এরপরই আমরা ইশতেহার ঘোষণা করব। এবারের ইশতেহারে কোন কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণতন্ত্র, অর্থনীতি, অবকাঠামো এগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে
। কারণ গণতন্ত্র থাকলেই একটা দেশ এগিয়ে যেতে পারে। তাই মূলত গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
এর আগে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনবদলের সনদ’ নামে নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। এতে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার ঘোষণা ছিল।
একটানা ১০ বছর ক্ষমতা থেকে এরই মধ্যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিশ্বের নজর কারার পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতিও পেয়েছে বাংলাদেশ।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনার আলোকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ইশতেহার তৈরির কাজ সমন্বয় করেছেন।
ইশতেহার প্রস্তুত কমিটিতে আরও রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কয়েক উপদেষ্টা, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েক নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বিভিন্ন বিষয়ের অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা।
ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা অফিসে তারা অক্টোবর মাস ধরে ধারাবাহিক মিটিং করেছেন। সর্বশেষ গত রোববার মিটিং করে ইশতেহার প্রস্তুত কমিটি।
কমিটির সঙ্গে যুক্ত এবং দলের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া যুগান্তরকে বলেন, ইশতেহারের খসড়া হয়ে গেছে। রোববার আমাদের একটা মিটিং ছিল। ১১ তারিখে ধানমণ্ডির ৩/এ তে আরেকটি মিটিং আছে।
এরপর খসড়া আমরা আমাদের নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে উপস্থাপন করব। উনি যদি কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করতে বলেন সেটা করা হবে। ওনার নির্দেশনা মেনেই সবকিছু করা হবে। এরপর তা ঘোষণা করা হবে।
ইশতেহার কমিটির নেতাদের কয়েকজন জানান, এবারের ইশতেহারে গণতন্ত্র, ক্ষমতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক নির্মূলের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পাচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় পদ্মা ও যমুনা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় থাকছে এবারের ইশতেহারে।
পাশাপাশি ইশতেহারে সরকার এবং রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য অর্জন যেমন- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, কৃষি ও শিক্ষায় উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অগ্রগতি, কর্মসংস্থান, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, ১০০টি অর্থনৈতিক জোন, নারী উন্নয়ন ও নারী নীতি বাস্তবায়নের বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকছে। দুর্নীতি রোধে গৃহীত পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরা হবে।
ইশতেহার তৈরির সঙ্গে যুক্ত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. অনুপম সেন যুগান্তরকে বলেন, আমাদের পরিকল্পনায় বিভিন্ন স্তর আছে। ২০২১ সালে দেশ কোথায় যাবে। ২০৪১ সালে কী অবস্থায় থাকবে।
২০৪১ যে উন্নত রাষ্ট্রের রূপকল্প দেয়া আছে সেটা কোন অবস্থায় থাকবে; এগুলো ইশতেহারে থাকবে। মূলত আমাদের কী করা উচিত এবং কী করতে পারি- এই বিষয়গুলো আমরা নিয়ে এসেছি। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশকে আরও সামনের দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা প্রয়াস আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ইশতেহারে সার্বিক বিষয়গুলোই আসবে। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে। যেমন ডেল্টা প্ল্যান, ২০৪১, ২০২১ সবগুলো বিষয়ই আওয়ামী লীগের পরিকল্পনায় আছে। সার্বিক নিরিখেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার হবে।