নির্বাচনকে সামনে রেখে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী আওয়ামী লীগ
বিশেষ প্রতিনিধি: বিগত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি উন্নয়ন হওয়া স্বত্তেও প্রশাসনে অস্থিরতা ও দলীয় কোন্দলের কারণে নির্বাচনকে সামনে রেখে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী আওয়ামী লীগ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে না পারলে মাঠ পর্যায়ে চরম বিপদের সম্মুখীন হতে হবে দলটিকে।
বিশ্ব অর্থনীতির চরম সংকট মুহুর্তেও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার গত ১০ বছরে ছিল ছয় দশমিক ৪৩ শতাংশ। মাথাপিছু আয় প্রায় ১৮০০ মার্কিন ডলার। রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দারিদ্রের হার ২৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া নয়া উপনেতাদের খপ্পরে পড়ে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন প্রায় উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন চার হাজার মেগাওয়াট থেকে ১৮ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এতো উন্নয়নের পরও দেশের জনগনের কাছে বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা শীর্ষে নেই। শীর্ষে রয়েছে আওয়ামীলীগ বিরোধী জোট। কোনো দলের দখলে নেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রত্যাশা। তবে আওয়ামীলীগ বিরোধীতাকারীরাও বিশ্বাস করেন দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশের জন্য শেখ হাসিনাকে দরকার।
চরম বৈষম্যে নিষ্পেষিত বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তির জন্য জীবনের প্রায় ১৪ টি বছর জেলে কাটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একজন বীরের মতো নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন বঙ্গবন্ধু। নানা চরাই উৎরাই পার করে সেই দেশকে উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসতে হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। তার অপ্রতিরোধ্য নেতৃত্বের কারণে আশপাশের অনেক দেশের কারণে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল হিসেবে কাজ করছে। পাকিস্তানের মানুষের কাছেও বাংলাদেশ এখন মডেল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, একটি দেশের এতো উন্নয়নের পরও আওয়ামী লীগের জয়লাভের বিষয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে কেন? এ মুহুর্তে দেশের জনগণকে নিশ্চয়তা দিতে পারলে জয়লাভের অন্তরায় থাকবে বলে মনে হয়না। যেসব ভুলের কারণে দলের জনপ্রিয়তা কমে গেছে তা হলো: সুবিধাভোগীরা দলীয় ও দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের নিরাপত্তায় সদা ব্যস্ত, শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সততার পরীক্ষা দিতে পারেননি, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা নজিরবিহীন হলেও প্রশাসনে চরম অসন্তোষ যা বর্তমান সরকারের জন্য ক্ষতিকর হবে, সাধারণ মানুষকে আস্থায় আনা যাচ্ছে না দলীয় চাঁদাবাজদের জন্য। দলীয় পদ ব্যাবহার করে অনিয়মের বরপুত্র হওয়া ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ও স্বাধীনতার ইতিহাস ও সুবিধা জনগণের মধ্যে তুলে ধরা যায়নি। দলীয় লোকজন প্রকৃত ইতিহাস জনগণের কাছে তুলে ধরার চেয়ে নিজেদের সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত।
বর্তমান সরকারের প্রচারণা ছিল চরম অগোছালো।প্রচারণার সেল খুব দুর্বল। যারা কাজ করবে তারাই সুবিধা গ্রহণে ব্যস্ত। এলাকাভিত্তিক মুখপাত্র নির্ধারণে ব্যর্থতা, কোন এলাকায় কে কাজ করবে তা নির্বাচন করার নেতাও নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরো বলেছেন, ক্ষমতায় যেতে হলে দুর্নীতিবাজ নেতাদের পরিহার করতে হবে। দুর্নীতি আর অপ্রত্যাশিত ব্যাপারগুলো পরিহার করতে পারলে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশে এ দলটি ক্ষমতায় আসতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ বিকল্প দল বিএনপিতে রয়েছে নেতৃত্বশূণ্যতা। উপরন্তু এ দলের নেতৃত্ব দুর্নীতিতে অকুন্ঠ নিমজ্জিত। এ সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলে আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনা শতভাগ।
প্রশাসনে অস্থিরতা:
সরকার সরকারি লোকদের অপ্রত্যাশিত সুবিধা দিলেও প্রশাসনের চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। তা প্রধানমন্ত্রী যাতে না জানতে না পারে সে সকল ব্যবস্থা প্রশাসনের লোকজনই ব্যবস্থা করে রেখেছে। প্রশাসনে শতভাগ আধিপত্য বিস্তার করছে প্রশাসন ক্যাডার। কী করলে আধিপত্য বজায় থাকবে তা তারা জানে। কোথাও ঘাটতি থাকলে তা তারাই পূরণ করে নেয়। এজন্য বাকীদের মধ্যে তীব্র অতৃপ্তি থেকে অসন্তোষ তিব্রতর হচ্ছে। যেমন: পদ না থাকলেও প্রশাসনের প্রমোশন হয়। এক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যাডার থেকে আনুপাতিক হারে পদ মোটেও দেয়া হয় না। এজন্য জবাবদিহি করতে হয়না। কারণ প্রশাসন ক্যাডার জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা অসম্ভব। প্রশাসন ক্যাডারে প্রমোশনের জন্য পদ থাকা লাগে না। যা অন্যান্য ক্যাডারে অত্যাবশ্যক। অন্যান্য ক্যাডারে পদ তৈরীও করতে দেয়া হয়না। ফলে একই পদে ১৫-২০ বছর থাকতে হয়। সকল সুবিধা প্রশাসন ক্যাডারের চাই। এজন্য সম্প্রতি প্রকল্প তৈরী ও বিদেশ ভ্রমণ নিজেদের করতে ইকনমিকস ক্যাডারকে তাদের সাথে নিয়ছে। ডিএসরা একটি গাড়ি পাবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন ছিল সমমানের কর্মকর্তা হলেই পাবে। একসাথে পরিক্ষা দিয়ে সমমেধার কর্মকর্তাদের মধ্যে এতটা বৈষম্য তৈরী করা নির্লজ্জের ব্যাপার। এ সুবিধা বরং না দিলেই ভাল হত। যত দ্রুত সম্ভব সমতা আনা উচিত। পদোন্নতির ব্যাপারে প্রতিটি ক্যাডারে একটি নীতি থাকা উচিত। ভুক্তভোগিরা মনে করেন, পদোন্নতিতে স্পষ্ট নীতিমালা থাকলে দুর্নীতি অনেকটা কমে যাবে। যেমন একই নিয়মে সকল ক্যাডারে প্রমোশন হওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগকে যে বাধা পার হতে হবে:
নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে হলে আওয়ামী লীগকে বেশ কিছু বাধা পার হতে হবে বলে মনে করেন দলের একাধিক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ নেতাদেরকে নিবৃাচনের বাইরে রাখতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারলে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে আর দেশে সৎ প্রশাসন থাকলে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত উন্নয়ন পৃথিবীর কেউ থামাতে পারবে না।
জনগণকে বুঝাতে হবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরবর্তী সরকার দেশ সেবার সুযোগ পেলে দুর্নীতির চিহ্ন ও থাকবে না। এলাকাভিত্তিক দলীয় কোন্দল থামানোর দায়িত্ব দিতে হবে। এজন্য যথাযথ পুরস্কার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের এখন প্রধান সমস্যার একটি হলো বেকার সমস্যা। কর্মসংস্হান শুধুমাত্র ঢাকামুখী না করে সারা দেশে কিভাবে করা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষে প্রত্যেকটি জেলা শহরে প্রয়োজনে উপজেলায় লাগসই শিল্প কারখানা করার পরিকল্পনা যুক্তিসংগতভাবে উপস্থাপন করতে হবে। কোন এলাকায় কী প্রতিষ্ঠান হবে তা এখনই জনগণকে জানাতে হবে। দলীয় প্রচারণার জন্য একটি কার্যকর টীম থাকা জরুরি। বর্তমানে সরকারি দলের কোন মুদ্রণ মাধ্যম নেই বললেই চলে। তাই জরুরিভিত্তিতে সঠিক প্রচারনা সেল গঠন করতে হবে। বিএনপি- জামায়াত জোট কোন্দল যেভাবে মেটাতে সফল ছিল আওয়ামী লীগ ততটা সফলতা কখনোই দেখাতে পারেনি। এ সময় আওয়ামী লীগের দরকার কোন্দল মিটিয়ে একক প্রার্থী নির্বাচন করা। অংগসংগঠনগুলোর মধ্যে আরো শক্তিশালী সমন্বয় প্রয়োজন। এসব সংগঠনের মধ্য থেকেই সৎ নেতৃত্ব খুঁজে সক্রিয় করতে হবে। এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ জোট তাদের প্রতিপক্ষের পাতানো ফাঁদে পা দেয়া ঠিক হবে না এমনটিই মনে করেন দলটির রজিনৈতিক শুভাকাঙ্খিরা।