ভোটের ১৫ দিন আগে নামবে সেনা
পুলিশের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত আপত্তির মুখে সশস্ত্র বাহিনীকে ভোটের ১৫ দিন আগেই মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেইসাথে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়েও নিষেধ করে দেয়া হয়েছে পুলিশকে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের সংস্থাটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপর পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-বিষয়ক বিশেষ সভায় পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এসব নির্দেশনা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা।
সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইজিপি, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ১২ দফা নির্দেশনা দেন সিইসি।
আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রতি জেলায় সশস্ত্র বাহিনীর ছোট ছোট টিম মাঠে থাকবে জানিয়ে পুলিশকে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশনা দেন সিইসি। তিনি বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা রোধ করা ঐতিহ্যগতভাবেই আপনাদের দায়িত্ব। এবারও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধান মতে কর্তৃত্ব নয়, বিবেক মতো কাজ করতে হবে। নির্বাচন যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। তবে নির্বাচন কমিশন তা নজরদারি করবে। ইতোমধ্যেই অভিযোগ আসা শুরু করেছে। তবে নির্বিঘেœ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ভালোভাবে যাচাই না করে পুলিশের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য ও পরামর্শ পুলিশের কাছ থকে বিভিন্ন বাহিনী নেবে উল্লেখ করে সিইসি পুলিশকে এখনই কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেন। ১৫ ডিসেম্বরের পর সশস্ত্র বাহিনীর ছোট ছোট দল পুলিশের সঙ্গে দেখা করবে। সশস্ত্র বাহিনীর ছোট টিম প্রতিটি জেলাতেই থাকবে। এদের নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। অন্যান্য বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে নিষেধ করে কেএম নূরুল হুদা বলেন, এটা আপনারা করবেন না। কারণ, এটা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। যারা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, তারা বিব্রত হন। আমরা এটা চাই না। তিনি বলেন, যদি তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়, তবে গোপন সূত্র ব্যবহার করে সংগ্রহ করতে পারেন। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। সিইসি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করবেন না, মামলা করবেন না। কাউকে হয়রানিমূলক মামলা বা গ্রেফতার করা যাবে না। আশা করি, আপনারা এটা করছেনও না।
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, পুলিশ প্রশাসনের কারণে যেন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সব দল অংশ নেবে। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের সবাই মিলেই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কাজ করতে হবে। নির্বাচনের সিংহভাগ দায়িত্ব পুলিশের থাকে। ভোটারের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের ওপরই বেশি থাকে।