শিশু ভাড়া করে ভিক্ষা বাণিজ্য
ঢাকায় শিশু ভাড়া করে চলছে ভয়ঙ্কর ভিক্ষা বাণিজ্য। ৩ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ভাড়া নিয়ে নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় ভিক্ষা করেন নারীরা। তাদের কোলে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা যায় এ শিশুদের।
দেখে শিশুটির মা মনে হলেও আসলে ওই নারীরা তাদের ভাড়ায় নিয়ে আসেন। রাজধানীর শাহবাগ, মগবাজার, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
জানা গেছে, ভাড়ায় আনা শিশুটি যাতে কাঁদতে না পারে সে জন্য তাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। ফলে ভিক্ষুক নারীর কাঁধে মাথা রেখে সারাক্ষণ ঘুমায় শিশুটি। চিকিৎসকরা বলছেন, ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোসহ নানা কারণে এ সব শিশুরা বিকাশজনিত সমস্যার পাশাপাশি নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, নগরীকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তবে সমাজসেবা অধিদফতর একটু নজর দিলে মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে তা আরও সহজ হবে।
সরেজমিন, রাজধানীর মগবাজার, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকা ঘুরে কোলে শিশু নিয়ে নারীদের ভিক্ষা করতে দেখা গেছে। গুলশানেও শিশু কোলে নিয়ে ভিক্ষা করছেন নারীরা।
গুলশান থানা পুলিশ জানিয়েছে, এ এলাকায় কোনো ভিক্ষুক চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়। গুলশান থানার পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে তাদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
বুধবার সকালেও গুলশান-বাডডা লিংক রোডে তিন মাসের সন্তান কোলে নিয়ে ভিক্ষা করার সময় শারমীন আক্তার নামে এক নারীকে আটক করা হয়েছে। কোলের বাচ্চাটি তার নিজের বলে দাবি করলেও পুলিশের সন্দেহ- এ বাচ্চা সে ভাড়ায় আনতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার মগবাজার এলাকায় ১ বছর বয়সী একটি শিশুকে ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে নিয়ে ভিক্ষা করতে দেখা যায় এক নারীকে। ওই নারী জানান, তার নিজের নাম আছমা। কোলের শিশুটি তার মেয়ের বলে দাবি করেন তিনি। জানান, শিশুটিকে রেখে তার মেয়ে মারা গেছে ৬ মাস আগে। মেয়ের স্বামী বাচ্চাটিকে তার কাছে রেখে অন্যত্র বিয়ে করেছে। সে খোঁজ-খবর রাখে না। এখন বাচ্চাটিকে মানুষ করতে পথে পথে ভিক্ষা করছি। বাসা কোথায় জানতে চাইলে তিনি আর কথা না বলে উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করেন।
বুধবার দুপুরে শাহবাগ মোড়ে একটি মেয়েকে কোলে নিয়ে ভিক্ষা করছিলেন রাশিদা নামে মাঝবয়সী এক নারী। শিশুটিকে নিয়ে কখনও রাস্তায় পথচারীর কাছে, আবার কখনও প্রাইভেট কারের জানালায় গিয়ে ভিক্ষা চাইছিলেন তিনি। কোলে ঘুমাচ্ছিল শিশুটি। রাশিদা জানান, শিশুটির নাম সালমা।
শিশুটির জন্মের পর তার বাবা অন্যত্র বিয়ে করেছে। এরপর থেকে সংসার চালাতে না পেরে তিনি শিশুকে নিয়ে ভিক্ষা করছেন। শিশুটি ঘুমাচ্ছে কেন? এ প্রশ্ন করতেই ওই নারী আর কথা না বলে সরে যান। এদিকে হাইকোর্ট এলাকায় অবস্থানরত এক ভিক্ষুক জানিয়েছেন, যে সব নারী রাস্তায় বাচ্চা কোলে নিয়ে ভিক্ষা করেন, তারা ওই শিশুটিকে আগে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন।
আর যাতে পায়খানা না করে সে জন্য সারাদিন কোনো খাবার না দিয়ে শুধু বেঁচে থাকার জন্য পানি খাওয়ান। এতে দুর্বল হয়ে পড়া শিশুটি ঘাড় ঝুলিয়ে শুয়ে থাকে। এভাবে শিশু কোলে নিয়ে ভিক্ষা করতে দেখা গেছে, রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ, বিজয় সরণি সিগনাল, পান্থপথ সিগন্যালসহ বিভিন্ন এলাকায়।
রাস্তায় শিশুদের দেখিয়ে সহজেই ভিক্ষা পাওয়া যায় বলে এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন অনেকে। গড়ে উঠেছে একাধিক চক্রও।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিসিএইচআরডি) নামে একটি সংস্থা ভিক্ষুকদের নিয়ে গবেষণার কাজ করছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, নগরীর যে সব এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে, সে সব এলাকায় ইদানীং ভিক্ষুকের আনাগোনা বেড়েছে।