মুদ্রা পাচারে জড়িত ৮৩ জন চিহ্নিত, তালিকা ধরে পদক্ষেপ
মুদ্রাপাচারে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্রের ৮৩ জনের তালিকা করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করে মুদ্রা পাচার করছেন। এদের অনেকে চোরাচালানেও জড়িত। তালিকায় নাম আছে তিন এয়ার হোস্টেজের।
এ তালিকায় জড়িতরা পাচারে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। এদের হাত হয়েই চলে পণ্যের বিনিময়ে অর্থ। এর বাইরে রয়েছে গডফাদার তালিকা- যারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মুদ্রা পাচারে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্রে রয়েছে রাজনৈতিক ব্যক্তি, ট্রাভেল এজেন্সির লোকজন, দেশি ও বিদেশি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লোকজন ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত কতিপয় বিপথগামী সদস্য।
তালিকায় নাম আসা ঢাকার উত্তরার জাকির হাসান ও সুশংকর মল্লিক গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন। এদের যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে। জাকির মধ্যপ্রাচ্যে এবং সুশংকর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর সিন্ডিকেটে জড়িত।
তালিকায় আরও যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- ব্যাংকক আনোয়ার, নাজমুল হোসেন, শাহীন আমীর, আশরাফ হোসেন, হাসান আলম। এরা বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলংকার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। সবাই পেশাদার হুন্ডি ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে আনোয়ার, নাজমুল ও শাহীন ব্যাংকক পুলিশের তালিকাভুক্ত।
তালিকায় নাম রয়েছে মুক্তাদির আহমেদ শামীম, আতিকুর রহমান, সেলিম খান, হারুনুর রশিদ, জয়নাল আবেদীন, হারিছ আলী, আমীর আলী, হারিছ আলী, ইয়ার রহমান বিজয়, রোমান, বকুল, আবুল আহাদ, মোস্তফা মিয়া, মুহাইমিন, শামীম, মোস্তাক আহমেদ, ইমরান আহমেদ, বাবুল মিয়া, জাবেদ খান, জসিম উদ্দিন, সুমন মিয়া, ডালিম, ফরিদ ও শাহজাহান, সুমন আহমদ, মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, জাহাঙ্গীর, আবদুল খালেক, কামরুল ইসলাম, আবু সুফিয়ান ও মামুনুর রশীদ। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীর, সেলিম ও খালেক বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুদ্রা পাচার সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা।
জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এ চক্রের সদস্যরা পাকিস্তানে অবস্থানরত পাসপোর্টবিহীন যে সব বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরতে চায় তাদের কাজে লাগায়। এদের মাধ্যমে বিশেষভাবে লাগেজ এবং ক্রোকারিজ আইটেমের ভেতরে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা পাচার করে তারা।
র্যাবের সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীর ও খালেকদের এ কাজে ঢাকা এয়ারেপার্ট ইমিগ্রেশন এবং গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করানোর দায়িত্ব পালন করে কামাল। এ চক্রের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বাসিন্দা জামাল, নিস্ফল মণ্ডল, প্রশান্ত মণ্ডল ও উত্তম কুমার সিনহা জড়িত। এরা ভারতীয় মুদ্রার বিনিময় করে।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘিরে যারা সক্রিয় রয়েছেন সে তালিকায় আছেন- হাসান মহসিন, আরিফুজ্জামান, জামাল ওরফে জামিল, আবদুল লতিফ, মতির মিয়া, রেজাউল ইসলাম, কামাল ওরফে যাত্রী কামাল, পারভীন আক্তার, শাহাবুদ্দিন, বাবুল চন্দ্র সারওয়ার, কায়সার, আমিনুল, সোহেল মিয়া, সাইফুল হক, আনোয়ার হোসেন, রেজাউল, সাইদ খন্দকার, বোরহান উদ্দিন, জিল্লুর, বড় আলমগীর, সুমন, আমির, বেলাল হোসেন, আলামিন, বুলবুল, জসিম ও কামরুল। এদের মধ্যে কামরুল ঢাকার মিরপুর এলাকায় থাকেন। তিনি মালয়েশিয়া ও দুবাইচক্রে জড়িত।
কায়সার, আনোয়ার ও সাইদ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড চক্রের হয়ে কাজ করেন। কায়সার এর আগে পুলিশের হাতে আটকও হয়েছিলেন। বড় আলমগীর উত্তরায় থাকেন। জিল্লুর থাকেন মুগদা এলাকায়। এ দু’জনের সঙ্গে ইটালিতে অবস্থিত আবদুস সালাম নামে এক মাফিয়া সদস্যের সম্পর্ক রয়েছে। সালাম মাসে দু’বার ঢাকা-ইটালি যাতায়াত করে থাকেন। জামিল ও বুলবুল নেপালি সিন্ডিকেটে জড়িত। এ দু’জনের সঙ্গে ব্যাংকক আনোয়ার ও নাজমুলের গভীর সংখ্যের তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকক আনোয়ার ব্যাংককে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি ওই দেশের পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে মুদ্রা পাচারের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সূত্রে জানা যায়, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বুপারাম পুলিশ স্টেশনে বাংলাদেশি নাজমুল হাসানের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খোয়া যায়। নাজমুল মুদ্রা চুরির অভিযোগ এনে বুপারাম পুলিশের কাছে লিখিত দেন। ওই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারেন আনোয়ার হোসেনের নাম। পরে তদন্তে জানা যায়, নাজমুল ও আনোয়ার একই চক্রের সদস্য।
নাজমুলের চুরি যাওয়া মুদ্রাও বৈধ নয়। এরা ভারত, নেপাল ও দুবাইভিত্তিক সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রফাতানির নামে মুদ্রা পাচার করেন।
জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, মুদ্রা পাচার ও জালিয়াতিতে জড়িত একটি চক্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা আন্তঃদেশীয় চক্র। এদের গ্রেফতার করা গেলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।