শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস প্রযুক্তিগত ত্রুটি, যুক্তরাষ্ট্রে বিমান চলাচল বন্ধ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার ‘হাইব্রিড আক্রমণ’ নিয়ে সতর্কতা জার্মানির ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর সাগরে ডুবে গেল বাংলাদেশ থেকে ফেরা সেই রুশ জাহাজ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 16 February, 2019 17:36

চলে গেলেন সোনালী কাবিনের কবি আল মাহমুদ

চলে গেলেন সোনালী কাবিনের কবি আল মাহমুদ
ঢাকা অফিস :

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ আর নেই। শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

কবির মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন পারিবারিক বন্ধু এবং কবি আল মাহমুদের সহকারী আবিদ আজম।

তিনি জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কবি আল মাহমুদ। তাকে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তিনি অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল হাইয়ের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। অবস্থা আরও গুরুতর হলে শুক্রবার তাকে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দেয়া হয়। পরে রাত ১১টা ৫ মিনিটে তিনি মারা যান।

কবি আল মাহমুদের পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মীর আবদুর রব ও মাতার নাম রওশন আরা মীর। তার দাদা আবদুল ওহাব মোল্লা হবিগঞ্জ জেলায় জমিদার ছিলেন।

কবি আল মাহমুদ কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়ালেখা করেন। মূলত এই সময় থেকেই তার লেখালেখির শুরু। আল মাহমুদ বেড়ে উঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি মধ্যযুগীয় প্রণয়োপাখ্যান, বৈষ্ণব পদাবলি, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল প্রমুখের সাহিত্য পাঠ করে ঢাকায় আসার পর কাব্য সাধনা শুরু করেন এবং একের পর এক সাফল্য লাভ করেন।

সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে মাহমুদ ঢাকা আগেমন করেন। সমকালীন বাংলা সাপ্তাহিক পত্র/পত্রিকার মধ্যে কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলায় লেখালেখি শুরু করেন। তিনি পাশাপাশি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে পদচারণা শুরু করেন। ১৯৫৫ সাল কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলার চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।

আল মাহমুদ ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দা নাদিরা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।

কবি আল মাহমুদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ সময়ে নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। পুরস্কার ও সম্মাননাসমূহ হলো: বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮), জয় বাংলা পুরস্কার (১৯৭২), হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২), জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২), কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৬), কবি জসীম উদ্দিন পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭), নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯০), ভানুসিংহ সম্মাননা পদক (২০০৪), লালন পুরস্কার (২০১১)।

কবির উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ: লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৬৬), মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (১৯৭৬), আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া, অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না, Al Mahmud In English, দিনযাপন, দ্বিতীয় ভাঙ্গন, একটি পাখি লেজ ঝোলা, পাখির কাছে ফুলের কাছে, আল মাহমুদের গল্প, গল্পসমগ্র, প্রেমের গল্প, যেভাবে বেড়ে উঠি, কিশোর সমগ্র, কবির আত্নবিশ্বাস, কবিতাসমগ্র, কবিতাসমগ্র-২, পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধ বণিক, ময়ূরীর মুখ, না কোন শূন্যতা মানি না, নদীর ভেতরের নদী, পাখির কাছে ফুলের কাছে, প্রেম ও ভালোবাসার কবিতা, প্রেম প্রকৃতির দ্রোহ আর প্রার্থনা কবিতা, প্রেমের কবিতা সমগ্র, উপমহাদেশ, বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ, উপন্যাস সমগ্র-১, উপন্যাস সমগ্র-২, উপন্যাস সমগ্র-৩, তোমার গন্ধে ফুল ফুটেছে (২০১৫), ছায়ায় ঢাকা মায়ার পাহাড় (রূপকথা), ত্রিশেরা, উড়াল কাব্য।

জানাজা: শনিবার বাদ জোহর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকে কবি আল মাহমুদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে দুপুর ১২টার পর কবির মরদেহ নেয়া হয় জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে। সেখানে কবি, সাহিত্যিকসহ সর্বস্তরের মানুষ কবির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।

প্রেস ক্লাবে প্রথম জানাজা শেষে কবিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে নেয়া হয়।

তার আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কবির মরদেহ নেয়া হয় বাংলা একাডেমিতে। সেখানে একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী কবির মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়া সোনালি কাবিনের এই কবিকে শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়নি।

উপরে