জামায়াত ক্ষমা চাইলেও যুদ্ধাপরাধ বিচার বন্ধ হবে না
জামায়াত নেতা আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামী কোনো চাল চালছে কিনা তা বুঝেই পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, জামায়াত এখনও ক্ষমা চায়নি। তারা ক্ষমা চাওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। জামায়াত ক্ষমা চাওয়ার পরও মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ হবে না।
রাজধানীর ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জামায়াত নেতার পদত্যাগ তার ব্যক্তিগত বিষয়। এটা তাদের দলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। জামায়াত বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে- এ খবর প্রকাশের পর দলের ভেতরে যারা আছে, তারা কেউ কেউ সরে যেতে পারে। তাদের উদ্দেশ্যটা আগে পরিষ্কার হোক, তারপর মন্তব্য করা যাবে।
জামায়াত নতুন নামে এলে আওয়ামী লীগ তাদের স্বাগত জানাবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। নতুন নামে, নতুন বোতলে পুরনো মদ আসলে পার্থক্য কোথায়? জিনিস তো একটিই। তাদের আদর্শ ঠিক আছে, নতুন নামে আদর্শ আসবে, তাহলে পার্থক্য কোথায়? এ বিষয়গুলো দেখতে হবে। নানা কথা মিডিয়ায় আসছে, এগুলো একটি আকার নেবে। এটি জামায়াতের কৌশলও হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চাকরিতে আবেদনের বয়স বাড়ানোর খবর গুজব : আগামী মাসে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ বছর করে দেয়া হবে- এমন খবর গুজব বলে উল্লেখ করেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ নিয়ে আমি কোনো কথা বলিনি। এটা তারাই গুজব ছড়াচ্ছে। সংবাদের মধ্যে আমার কোনো ভয়েস আছে? ভয়েস না থাকলে হয় কী করে? তিনি আরও বলেন, আমি এ ধরনের কোনো কথা বলিনি। সরকারের সিদ্ধান্তের আগে আমি কী বলব? আমি সরকার ও পার্টির গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছি, আমার দায়িত্বহীন কোনো কথা বলা উচিত নয়। চাকরিতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত সরকারি পর্যায়ে এখনও হয়নি, আমি এ ব্যাপারে কোথায় মন্তব্য করলাম? আমার তো জানা নেই।
এখনও শেখ হাসিনার বিকল্প নেই : আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবসরের বিষয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগেও রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন, দলের নেতাকর্মীদের চাপের মুখে তিনি ঘোষণা দিয়েও সরে যেতে পারেননি। তিনি বলেন, আসলে বাস্তবতা হচ্ছে, এখনও শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প আমাদের পার্টিতে নেই এবং তার কোনো বিকল্প সমসাময়িক রাজনীতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও নেই।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে শেখ হাসিনার বিষয়টি স্মরণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতিকরা ভাবেন পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে, শেখ হাসিনা ভাবেন পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে। দক্ষতা, যোগ্যতা, সততায় শেখ হাসিনাকে কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। তিনি সবাইকে অতিক্রম করে গেছেন, তিনি নিজেকেও অতিক্রম করে গেছেন। আগামী পাঁচ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকেই দলের চাওয়ার কথা বলেন তিনি।
সরকার একনায়কতন্ত্র কায়েম করছে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলন ও নির্বাচনে শোচনীয় ব্যর্থতা তাদের বেপরোয়া করে ফেলেছে। তাদের মধ্যে হতাশা চরমে। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) বেসামালও হয়ে গেছে। বেসামাল মানুষ কখন যে কী বলে! এটা এক ধরনের অসংলগ্ন প্রলাপই বলা যায়। বেসামাল লোকজন অসংলগ্ন প্রলাপ বকবে, এটাই স্বাভাবিক।
ভারতের নিরাপত্তাকর্মী হত্যার নিন্দা : ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে জঙ্গিদের বোমা হামলায় নিরাপত্তাকর্মী নিহতের ঘটনার নিন্দা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ভারত আমাদের খুব কাছের একটা দেশ। ৪৫ জন ভারতীয় জোয়ান সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ভারতের জনগণের বেদনা, কষ্টের আমরাও অংশীদার।
জাতীয় ইস্যুতে ভারতের সরকার ও বিরোধী দলের এক সুরে কথা বলার উদাহরণ তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশেও তা আশা করি। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনায় জাতি (ভারতীয়রা) হিসেবে সবাই এক ভয়েসে কথা বলছে। তারা অল পার্টি মিটিংয়ে বসেছে। জাতীয় ইস্যুতে সবাই একসঙ্গে বসে যাওয়া, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাহুল গান্ধীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা- আমি শুধু ভাবছিলাম এই স্পিরিট ও ইমোশনটা আমাদের মধ্যে নেই কেন? হলি আর্টিজানের ঘটনায় আমরা তো এক ভয়েসে কথা বলতে পারিনি, শোলাকিয়ার ঘটনায় আমরা তো এক ভয়েসে কথা বলতে পারিনি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।