ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ ৮৭ রুটে পরিবহন ধর্মঘট
চট্টগ্রামে বাসচালক জালাল উদ্দিন (৫০) হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ ৮৭ রুটে চলছে পরিবহন ধর্মঘট।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলার কথা।
বুধবার দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ইয়াবা তল্লাশির নামে বাসচালক জালাল উদ্দিনকে হত্যার ঘটনায় নগরীর কর্ণফুলী থানায় মামলা হয়েছে। নিহতের ছোট ভাই জুয়েল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে ধর্মঘট প্রত্যাহারে বুধবার বিকেল ৫টায় পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সার্কিট হাউসে বৈঠক করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন। এতে জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনাসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকে প্রশাসনের ডাকে সাড়া দেননি শ্রমিক নেতারা।
তারা ধর্মঘটের পক্ষে অনড় অবস্থান নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শ্রমিক ফেডারেশন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক আহ্বান করেছেন। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে কিনা।
কর্ণফুলী থানার ওসি আলমগীর মাহমুদ বলেন, ‘শ্যামলী পরিবহনের বাসচালককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য নেয়ার পাশাপাশি সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহের কাজ চলছে। একইভাবে হত্যাকারীদের ধরতে প্রযুক্তির নানা সহায়তা চাওয়া হচ্ছে। আশা করছি হত্যাকারী যে বা যারা হোক অবশ্যই তাদের ধরা পড়তেই হবে।’
পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন (চট্টগ্রাম ও সিলেট) সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, ‘বুধবার বিকাল ৫টায় শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের নিয়ে সার্কিট হাউসে এক বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে নিহতের পরিবারকে বৃহস্পতিবার এক লাখ টাকার চেক দেয়ারও সভায় ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, এর পরও আমরা ঘোষিত ধর্মঘটের পক্ষে অনড় অবস্থানে ছিলাম। প্রশাসনকে বলেছি, ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘট চলবে। বৃহস্পতিবার ফেডারেশন শ্রমিকদের নিয়ে বেলা ১১টায় কার্যালয়ে বৈঠক হবে। এতে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অলি আহমেদ বলেন, ‘ডিবি পুলিশ পরিচয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিতে এই শ্রমিক ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ ৮৭ রুটে (৬৮টি আন্তঃজেলা ও ১৯টি স্থানীয়) চট্টগ্রাম থেকে চলাচলকারী যাত্রীবাহী পরিবহনে শ্রমিক ধর্মঘট চলছে। এছাড়া রোববার সকাল ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় (চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজার) পণ্য ও যাত্রীবাহী উভয় ধরনের পরিবহনে শ্রমিক ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।’
সোমবার রাত ৮টায় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস। পথে পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলাসংলগ্ন শিকলবাহা সেতু এলাকায় বাসটিকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে থামান অন্তত ৭ জন ব্যক্তি। এরপর তারা বাসে উঠে তল্লাশি শুরু করেন।
একপর্যায়ে বাসের চালক জালালের হাতে হাতকড়া পরিয়ে ইয়াবা বের করে দিতে বলেন তারা। ইয়াবা নেই বলে জানালে চালককে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করেন গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দেয়া ব্যক্তিরা। একপর্যায়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে লাথি মারতে মারতে অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রাত আড়াইটার দিকে মুমূর্ষু জালালকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত জালালের ছোটভাই জুয়েল হোসেন জানান, তার ভাইকে মুখে বালি ঢুকিয়ে, পানিতে চুবিয়ে, শ্বাসরোধ করে করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাসটির সুপারভাইজারকেও গুরুতর আহত করা হয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দিনাজপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট:
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামে দিনাজপুরের বাসচালক জালাল হোসেনকে হত্যার অভিযোগে দিনাজপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে দিনাজপুর মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন।
বৃহস্পতিবার থেকে এই ধর্মঘট আহ্বান করা হলেও বুধবার সন্ধ্যা থেকেই ধর্মঘট শুরু করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। ফলে দিনাজপুরে সব প্রকার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
দিনাজপুর মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী জানান, চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকায় দিনাজপুরের বাসচালক জালাল হোসেনকে হত্যার প্রতিবাদে দিনাজপুরে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা না করা পর্যন্ত এই ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
এদিকে বাসচালক জালাল হোসেনকে হত্যার প্রতিবাদে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই দিনাজপুরের সকল বাস-ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। বুধবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর পিডিবি অফিসের সামনে মহসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা।
এতে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আকস্মিক এই ব্যারিকেড দেয়ার ফলে ওই মহাসড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে যায়।