জামায়াত ভেঙে নতুন সংগঠন ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’
জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত একটি অংশ দল থেকে বেরিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার লক্ষ্যে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামের এই প্ল্যাটফর্মের উদ্যোক্তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে প্রতিশ্রুত বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে জাতীয় জীবনের সকল অর্জন ও ঐক্যের জায়গাগুলো সমন্বিত করে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি প্রস্তুত করা প্রয়োজন।
তারা বলছেন, ‘এটি প্রচলিত কোনো রাজনৈতিক ধারা বা দলের অনুসারী কিংবা অনুরক্ত নয়, এটা সম্পূর্ণ স্বাধীন উদ্যোগ ও একটি স্বতন্ত্র ধারা। জামায়াতে ইসলামীসহ বিদ্যমান কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিক দল হবে সত্যিকার অর্থে ইনক্লুসিভ ও একটি ইতিবাচক বাংলাদেশ গড়ার নতুন রাজনৈতিক কার্যক্রম।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে হোটেল 'সেভেন্টি ওয়ান' এ সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ প্ল্যাটফর্ম গঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন প্লাটফর্মের সমন্বয়ক মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি এর আগে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন।
নতুন দল গঠনের উদ্দেশ্যে পাঁচটি পৃথক কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক প্রস্তাবনার খসড়া প্রণয়ন কমিটি, জনসংযোগ ও অন্তর্ভুক্তি তত্ত্বাবধায়ন কমিটি, গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কমিটি, অর্থ ও সংগ্রহ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা কমিটি এবং সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তাবনা, কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা কমিটি।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শাসনামলে দুবার গভীর সংকটকালে জাতিকে নতুন পথ দেখিয়েছিল মুসলিম লীগ ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ। আর স্বাধীন বাংলাদেশে তেমন এক ক্রান্তিকালে হাল ধরেছিলেন জিয়াউর রহমান। প্রায় চার যুগ পরে আজ আবার আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি তেমন আরেক বাকপরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে। একাত্তরে যে আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেওয়ার দায়িত্ব বোধ করছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় জীবনের এত গভীর সংকট সত্বেও বিভিন্ন দল গোষ্ঠী ও ধারা মতাদর্শিক বিভাজন এবং বিভক্তির কারণে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। জাতীয় ঐক্য কখনোই কোনো দল এবং দলীয় আদর্শে বিশ্বাস স্থাপন করে সূচিত হয় না। এর জন্য প্রয়োজন সকলের অস্তিত্ব, সমস্বার্থ ও মর্যাদা সুরক্ষায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সর্বজনীন মূলনীতি।’
জামায়াতের ভেতর সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, অতীতে যেখানে ভূমিকা রাখতে চেয়েছিলাম সেখানে যখন নেই, সেই বিষয়ে কথা না বলি। আমরা নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি। অতীতের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কে নেই। আমরা কোনো তত্ত্বের কথা বলব না, অধিকারের কথা বলব।
নতুন দল গড়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাহলে জামায়াত ভেঙে যাচ্ছে, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ভাঙা-গড়ায় বিশ্বাসী নই।
একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীর ক্ষমা চাওয়া উচিত কি না, এই প্রশ্নের জবাবে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, যে দলে এখন আর আমি নেই, সেই দলের সম্পর্কে কোনো কথা না বলাই ভালো।
জামায়াতের প্রাক্তন নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাক এই উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, জানতে চাইলে নতুন দল গড়ার এই উদ্যোক্তা জানান, আমরা পরামর্শের জন্য যে কারো কাছেই যেতে পারি।
সংবাদ সম্মেলনে মজিবুর রহমান মঞ্জুর পাশে অবসরপ্রাপ্ত মেজর আাবদুল ওহাব মিনার, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জুবায়েল আহমেদ ভুইয়া, মাওলানা আবদুল কাদের, মাওলানা তাজুল ইসলাম, গোলাম ফারুক, গৌতম দাস, ড. কামাল উদ্দিন, সোম্তফা নুর, নাজমুল হুদা অপু উপস্থিত ছিলেন।