শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস প্রযুক্তিগত ত্রুটি, যুক্তরাষ্ট্রে বিমান চলাচল বন্ধ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার ‘হাইব্রিড আক্রমণ’ নিয়ে সতর্কতা জার্মানির ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর সাগরে ডুবে গেল বাংলাদেশ থেকে ফেরা সেই রুশ জাহাজ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 9 August, 2019 13:07

সন্ধ্যার ভাঙনে ছোট হচ্ছে বানারীপাড়ার মানচিত্র

সন্ধ্যার ভাঙনে ছোট হচ্ছে বানারীপাড়ার মানচিত্র
ঢাকা অফিস :

সন্ধ্যা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে বানারীপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটামাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব ও সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছে।

সবকিছু হারিয়ে অনেকে যাযাবর জীবন বেছে নিয়েছেন। অপরদিকে নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করেছে। ক্রমাগত ভাঙনে বানারীপাড়ার মানচিত্র ছোট হয়ে আসছে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালুমহালের ইজারা আহ্বান করায় বানারীপাড়াবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বরিশালের অন্যতম ভয়ংকর নদী সন্ধ্যা বানারীপাড়া উপজেলার পাশ থেকে বয়ে গেছে। এর অব্যাহত ভাঙনে জিরারকাঠি, হক সাহেবের হাট, মসজিদবাড়ি, চাউলাকাঠি, কালীরবাজার, নলেশ্রী, দিদিহার, উত্তরকূল, বাংলাবাজার, শিয়ালকাঠি, দান্ডয়াট, উত্তর নাজিরপুর, দক্ষিণ নাজিরপুর, জম্বদ্বীপ, ব্রাহ্মণকাঠি, কাজলাহারসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজার, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা বিলীন হয়ে গেছে। সর্বশেষ শনিবার বানারীপাড়া ফেরিঘাটের পশ্চিম তীরে ভেঙে গেছে। এ ভাঙন অব্যাহত থাকলে পুরো ফেরিঘাট ভেঙে যাবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, একদিকে নদীর তাণ্ডব ও অপরদিকে নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের চাপে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের ৬ জুন বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ভাঙন পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। এ সময় বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এখানকার ভাঙন ঠেকানো হবে।

অথচ মন্ত্রীর এ আশ্বাস উপেক্ষা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে উপজেলার বিভিন্ন বালুমহালের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন বানারীপাড়াবাসী। এ ইজারা অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান তারা। ইজারা বাতিল করা না হলে তারা আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন।

এর আগে স্থানীয় এমপি মো. শাহে আলম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি রুবিনা মীরা ভাঙন প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নেন। নদীভাঙন রোধে এবং বালু উত্তোলন বন্ধে মাঠে নেমেছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শরীফ উদ্দিন আহমেদ কিসলু। তিনি বলেন, এ বিষয়ে চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত দিয়েছি।

কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো সাড়া না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছি। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়েছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে আমরা সোচ্চার হলেও জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে নামব। উপজেলাবাসীকে একত্র করে আমরা এ আন্দোলন করব।

স্থানীয়রা জানান, বালু উত্তোলনের ফলে সৈয়দকাঠি, চাখার, বাইশারী ও বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাইশারী ইউনিয়নের নাটুয়ারপাড় মহিলা মাদ্রাসা, উত্তর নাজিরপুর গ্রামের ধানেরহাট, শিয়ালকাঠি ফেরিঘাট, সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের মসজিদবাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নলেশ্রী, দিদিহার এলাকা, চাখারের কালীরবাজার, সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের গোয়াইলবাড়ি, খেজুরবাড়ি, খোদাবখশা এবং সদর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকাঠি ও কাজলাহার গ্রামের বিস্তীর্ণ জনপদ, শিক্ষা ও ধর্মীয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদী গ্রাস করেছে। হুমকির মুখে পড়েছে খেজুরবাড়ি আবাসন, বাংলাবাজার ও উত্তর নাজিরপুর গুচ্ছগ্রাম।

এলাকাবাসী জানান, সন্ধ্যার ভাঙন রোধে সব সরকারের আমলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা শুধু প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বালুমহাল ইজারা বাতিল করে ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ সাদীদ বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে বালুমহালের ইজারা দেয়া হয়। এখনও এ প্রক্রিয়া চলছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, সঠিকভাবে ও বৈধপথে বালু উত্তোলন করলে নদীতে ভাঙন হয় না। বরং নদীর গতিপথ ঠিক থাকে। তিনি বলেন, বালুমহালের ইজারা দেয়া হয়েছে এবং ইজারাপ্রাপ্তদের সঠিক নিয়মে বালু উত্তোলনের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে করে নদী আর ভাঙবে না।

উপরে