প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি কষ্টসাধ্য
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী অক্টোবরে ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি হওয়া কষ্টসাধ্য বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফররত ভারতের পানিসম্পদ সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং। তিস্তা ও অভিন্ন ছয়টি নদীর চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বিষয়গুলোর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে এটি বলা বেশ কষ্টসাধ্য।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
দীর্ঘ আট বছর পর বাংলাদেশ-ভারত পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ের বৈঠক হল। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার। আর ভারতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পানিসম্পদ সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং।
গঙ্গা বাঁধ প্রকল্প নিয়ে ভারতের কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে উপেন্দ্র প্রসাদ সিং বলেন, নদীতে যে কোনো বাধার বিভিন্ন প্রভাব রয়েছে। পানি ব্যবহারের জন্য বাঁধ তৈরি করা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে দুটি বিষয় আমরা জোর দিতে চাই। একটি হল কীভাবে এ দিয়ে দুই দেশ সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে পারে। বেশি সুবিধা অবশ্যই বাংলাদেশ অংশে যাবে। আর এর থেকে আমরাও কিছুটা সুবিধা পেতে পারি। আর একইসঙ্গে দ্বিতীয় বিষয়টি হল আমরা এ বাঁধের কারণে সবচেয়ে কম বিরূপ প্রভাব চাই। যেমন ফারাক্কার কারণে বিহার রাজ্য অভিযোগ করে আসছে। ফলে এ বাঁধের প্রভাবে সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে যৌথ গবেষণা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে আমাদের একটি যৌথ গবেষণা কমিটি ছিল। তবে এটিকে আরও বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি নিয়ে আবারও কমিটি করা হবে। সেখানে ভারত ও বাংলাদেশের দু’জন করে সদস্য থাকবেন। এ কমিটি একটি টার্ম অব রেফারেন্স (টিওআর) তৈরি করবে। ফলে গঙ্গা বাঁধ নিয়ে প্রথমে টিওআর এবং পরবর্তী সময়ে কমিটি গঠনের কাজটি হবে।
ভারতের সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং বলেন, ফেনী নদী ত্রিপুরায় সুপেয় পানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ নদী নিয়ে আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য নেই। এ ছাড়া তিস্তাসহ অন্য নদী নিয়ে আমাদের তথ্য রয়েছে। তবে তা হালনাগাদ নয়। এ তথ্যে অসঙ্গতি রয়েছে। এগুলো সব নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি যৌথ কারিগরি দল গঠন করা হবে। যারা এসব নদীর তথ্য হালনাগাদ করবে। এরপরও তথ্য নিয়ে অসঙ্গতি দেখা দিলে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি করব। আর এ সময় আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করব। কারণ এ ধরনের ইস্যুতে সময় নিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়। ১৫ বছরের জন্য একটি চুক্তি করা হতে পারে। আর এ সময়ের মধ্যে আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করে চুক্তিগুলো সংশোধন করব। বৈঠকে দুটি মূল বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বাংলাদেশের পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন ৫৪টি নদীর মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে গঙ্গা চুক্তি। যাতে আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছি। এ ছাড়া তিস্তাসহ আরও সাতটি নদী মনু, ধরলা, খোয়াই, গোমতী, মুহুরি, ফেনীসহ উত্তর অংশের নদী নিয়ে পানি বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তিতে ঐকমত্যে এসেছি। তিনি বলেন, এ ছাড়া পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় নদী অববাহিকাভিত্তিক কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে নদী খনন, দূষণ, বাঁধ বা অবকাঠামোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা হবে। এ নিয়ে কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া দর্শনার নদীদূষণ ভারতে গিয়ে পড়ছে, এ ছাড়া আগরতলায় নদীদূষণ আমাদের দিকে আসছে। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা স্থান পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করবে। তার ওপর আমরা ইটিপি তৈরি করা বা অন্যসব ব্যবস্থার বিষয়ে যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেব।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছয়টি ও ভারতের পক্ষ থেকে ছয়টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের এজেন্ডাগুলোর মধ্যে রয়েছে- গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির আওতায় প্রাপ্ত পানির ব্যবহার নিয়ে যৌথ সমীক্ষা, মনু, মহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বণ্টন চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন, সুরমা ও কুশিয়ারা প্রকল্পের অবশিষ্ট অংশ খনন এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বিষয়ে দু’দেশের সহযোগিতা সম্প্রসারণ। আরও রয়েছে- বাংলাদেশের আখাউড়া সিঅ্যান্ডবি খাল ও নদীদূষণ ও আন্তঃসীমান্ত নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা।
অপরদিকে ভারতের এজেন্ডায় রয়েছে- মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বণ্টন। এ ছাড়া আত্রাই, পুনর্ভবা ও টাংগন নদীতে শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহ হ্রাস, পশ্চিম বাংলার মাথাভাংগা-চুর্নী নদীদূষণ এবং ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরায় সরবরাহ করা।