৮০১ প্রতিমা নিয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পূজামন্ডপ বাগেরহাটে
মোঘল ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ন নিদর্শনের শহর বাগেরহাট। সেই হিসেবে এই জনপদের আছে অতীত ঐতিহ্য। সুন্দরবনের কাছেই গড়ে ওঠা এই জনপদে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে মহাধূমধামে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় হাকিমপুরের শিকদার বাড়িতে। লক্ষ লক্ষ আগত দর্শনার্থীর পদচারনায় প্রতিবছরই জমজমাট হয়ে ওঠে এই পূজা মন্ডপ।
সারা বাংলাদেশের আর কোথাও এত সংখ্যাক প্রতিমায় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়না। তবে পূজা আয়োজকরা বলেছেন,প্রতিমার সংখ্যার দিক থেকে,“এটি শুধু বাংলাদেশেরই নয়-দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ পূজা মন্ডপ”। বিগত কয়েকবছর ধরেই এই পূজামন্ডপে মহাধূমধামে শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
হাকিমপুর শিকদারবাড়ী ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমার কাঠামো নির্মান এবং মাটির প্রলেপের কাজ শেষ। শিল্পিরা ব্যাস্ত রঙ আর সাজ সজ্জায়। বিগত বছরগুলোতে দেশজুড়ে আলোচনার শীর্ষে ছিলো হাকিমপুর শিকদারবাড়ীর ব্যাপক সংখ্যাক প্রতিমা। প্রতিবছরই এই পূজায় বাড়ানো হচ্ছে প্রতিমার সংখ্যা। গত বছরের তুলনায় এই মন্ডপে আরো নতুন ১০০ প্রতিমা যোগ হয়েছে। ৮০১টি প্রতিমায় শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে এই পূজামন্ডপে।
প্রতিমা তৈরীর কারিগর কয়রা উপজেলার হাতিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃৎশিল্পি বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় জানান, তিনি গত কয়েক বছর ধরেই এই মন্ডপের প্রতিমা তৈরীর কাজ করছেন। গত সনের ১লা বৈশাখ থেকে তিনি ১০/১৫ জন ভাস্কর নিয়ে প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু করেন। প্রতিমার কাজ শেষ করতে সবমিলিয়ে ৭/৮ মাস সময় লাগে। তবে এখনও বাকী সাজসজ্জার অনেক কাজ।
পূজা আয়োজকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, মন্দির কর্তৃপক্ষের চাহিদা একটাই আর সে চাহিদা হলো ধর্মানুরাগীদের সন্তুষ্ট করা। সে লক্ষ্যে তিনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বনে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর আর কলি যুগের বিভিন্ন অবতারের লীলা কাহিনী নিয়ে এবারও প্রতিমা গুলি তৈরী করা হয়েছে। যা ভক্তদের আনন্দ দেবে ও সর্বোপরী ধর্মীয় নানা বিষয় সম্পর্কে ধর্মানুরাগী মানুষকে আকৃষ্ট করবে।
দেখা গেছে, প্রতিমাগুলো রাস্তার দুপাশে কয়েকটি সারিতে বিন্যাস করে সাজানো। পূজোর সময় ভিড় নিয়ন্ত্রনে রাখা হয়েছে একমূখী রাস্তা। তার দুপাশেই সাজানো হচ্ছে নানা ধরনের প্রতীমা। হিন্দু বিভিন্ন ধর্মীয়গ্রন্থ ও পৌরানিক কাহিনীকে প্রতিমার মাধ্যমে রূপায়ন করা হয়েছে। যেমন দশমহাবিদ্যা, দেবতাদের প্রার্থনা, শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন, ধনুর বিদ্যাভ্যাস,শিব পার্বতীর কাহিনী সহ অসংখ্য ধর্মীয় বিষয়াবলী। সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে আছে বিভিন্ন সামাজিক বিষয় নিয়ে তৈরী প্রতিমা।
মন্দিরের পৃষ্ঠপোষক শিল্পপতি লিটন শিকদার জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠান।
২০১১ সাল থেকেই এখানে পূজার আয়োজন করা হয়। তার পিতা ডাঃ দুলাল শিকদার এই মন্দিরের সভাপতি ছিলেন। তিনি এ বছর পরলোকগত হয়েছেন। তার আত্মার শান্তি ও মঙ্গলার্থে এবছর প্রতিমার সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, পূজার সময় শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির একাধিক টিম মাঠে থাকবে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে।
নিউইয়র্ক মেইল/বাগেরহাট/২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯/অমিত পাল/এইচএম