শিশু তুহিনের হত্যাকারী বাবা-চাচা-ভাই!
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের সন্তান তুহিনকে জবাই করে হত্যা করেছেন পাষণ্ড পিতা আব্দুল বাছির, তার তিন ভাই ও ভাতিজা। এ ঘটনায় নিহতের বাবা, চার চাচা ও এক চাচাত ভাইকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায় রাজানগর ইউনিয়নে শিশু তুহিন আহমদ হত্যাকান্ডে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম কান্ত সিনহা রিমান্ড মঞ্জুর করে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, পূর্বশত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে পিতাসহ আরও কয়েকজন মিলে। এ ঘটনায় পুলিশ আসামীদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট তাদের তিন দিনের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে আজ মঙ্গলবার ভোরে তুহিনের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে দিরাই উপজেলা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গতকাল সোমবার ভোরে তুহিনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করার পর তার পিতাসহ ছয় সাতকে আটক করে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই সময় তারা তুহিন হত্যার পুুরো ঘটনার বিবরণ দেন।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সুনামগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘দিরাইয়ের রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউরা গ্রামের পাঁচ বছরের শিশু তুহিনকে নির্মমভাবে গলা, কান ও লিঙ্গ কেটে হত্যা করা হয়েছে। তার পেটে দু’টি ছুরি বিদ্ধ করে বাড়ির পাশে কদম গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই এমনটি করেছে শিশুটির নিজের বাবা-চাচারা। পুরো বিষয়টি আমরা খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। ’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রাথমিক সন্দেহের ভিত্তিতে নিহতের বাবা-চাচাসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা খুনের ঘটনা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় তুহিনের চাচা নাসির ও চাচাত ভাই শাহরিয়ার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। নিজের সন্তান ছাড়াও ছেলেটির বাবা আব্দুল বাছির অপর একটি হত্যা মামলার আসামি।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘তুহিন হত্যার ঘটনা তদন্তে আমাদের মাননীয় আইসিপি স্যার এবং সিলেট অঞ্চলের ডিআইজি স্যার সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। আমরা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করেছি। কারা মেরেছে, কেন মেরেছে, কীভাবে মেরেছে পুরো বিষয়টি আমরা জেনেছি। শিগগিরই মামলাটির পুলিশ রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে তুহিন হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষুদ্ধ জনতা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়। সামাজিক মাধ্যমে ফুঁসে উঠেছে শিশু তুহিন হত্যাকান্ডে নিন্দার ঝড়।
দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে একের পর এক আওয়াজ তুলেছে নানা শ্রেনি পেশার মানুষ। জোট বেঁধেছে ছোট বড় অঙ্গ সংগঠনের মানুষেরা। রাস্তায় নেমেছে ওরা প্রতিবাদি ভাষায় শিশু হত্যার বিচার নিয়ে।