বকনার দুধে রোগমুক্তি!
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমাচ্ছে এখানে। ঘটনাটি ঘটেছে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাঁশতলী ইউনিয়নের বাঁশতলী গ্রামের নিম্নবিত্ত মহানন্দ মন্ডল এর বাড়িতে। তার পোষা ১৮ মাস বয়সী বকনা বাছুর বাচ্চা প্রসব না করেই দৈনিক প্রায় ৪ কেজি দুধ দিচ্ছে। তিনি এর নাম রেখেছেন শ্যামলী।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ অলৌকিক বিশ্বাসের জেরে ভীড় জমাচ্ছে এই বাড়িতে। প্রত্যেকের হাতেই দুধ সংগ্রহ করার পাত্র। সবাই অপেক্ষা করছে কখন শ্যামলী দুধ দেবে, আর বাড়ির মালিক তা সকলের মাঝে বন্টন করবেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, ভোর থেকে বেলা ৮টা পর্যন্ত এই দুধ সংগ্রহের সময়। দুধ খেতে হয় পরপর তিনদিন সকালে। এটাই এর নিয়ম। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ঘুমজড়ানো চোখে গ্রামের এই ফাঁকা রাস্তা পরিপূর্ন হয় রোগমুক্তির লক্ষ্যে আসা দর্শনাথী এবং রোগীদের ভীড়ে।
ঢাকা থেকে আসা মোহাম্মদ আবুল মনসুর হাওলাদার জানান, লোকমুখে শুনে তিনি মূলত এখানে এসেছেন। কোন ধরনের টাকা পয়সা ছাড়াই তিনি এখান থেকে দুধ পেয়েছেন। তার মা প্যারালাইসীস এ শয্যাশায়ী। এ থেকে সুস্থতা পাবার আশায় তিনি এখানে এসেছেন।
যশোর থেকে আসা তরুন কুমার শিকদার জানান, তার হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারনে ভারত সহ বিভিন্ন জায়গাতে ডাক্তার দেখিছেন কিন্তু সুস্থ হতে পারেননি। এখানে পরপর ২দিন দুধ খেয়েছেন। সুস্থতা বোধ করার কারনে তিনি আবারও দুধ নিতে এসেছেন।
চুলকাঠী গ্রামের সাগর ফকির জানান,তিনি তার কোমরে ব্যাথার জন্য বিভিন্ন স্থানে ডাক্তার দেখিয়েছেন। এখানে এসে তিনি সুস্থ হয়েছেন। তাই তার প্রতিবেশীর সাথে তিনি আবার এখানে এসেছেন।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার জয়নাল জানান, গত ২ বছর ধরে তার শরীরে রাতে জ্বর আসতো। বিভিন্ন স্থানে ডাক্তার দেখিয়েও সুস্থ হতে পারেননি। তবে এখানে এসে তিনি সুস্থ হয়েছেন বলে দাবী করেন।
বকনার মালিক মহানন্দ মন্ডল জানান, তিনি দুধ বিক্রয় করে সংসার চালানোর উদ্দেশ্যেই ১৮ মাস বয়সী বকনা বাছুরটি তিনি বাগেরহাট থেকে কিনে আনেন। হঠাৎ একদিন সকালে তিনি বকনার বাট ফোলা দেখে কৌতুহল বশত হাত দিয়ে দেখেন দুধ এসেছে। এই দুধ তিনি এবং পরিবারের সকলেই খেয়েছিলেন। এতে তিনি নিজে রোগ থেকে মুক্তি পান। এরপর প্রতিবেশীর মাধ্যমে কথা ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে ভীড় জমাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন ,অনেকেই আমাকে টাকা নেবার জন্য বলেছে, কিন্তু আমি দুধের বিনিময়ে কোনো টাকা নিতে রাজী না। এই দুধ খেয়ে কেউ উপকৃত হলে সেটাই বড় কথা। লোকজনের ভীড় সামাল দিতে তাদের প্রতিবেশী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা সহযোগীতা করছে বলেও জানান তিনি।
রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুকান্ত কুমার পাল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বকনার দুধ খেয়ে রোগ সারার কোনো সম্ভাবনা বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটি অলৌকিক কোনো বিষয় না, আসলে একটি হরমোনগত জটিলতার ব্যাপার যার কারনে বকনাটি বাচ্চা প্রসব না করেই দুধ দিচ্ছে। এই দুধ স্বাভাবিক দুধের মতো খেলে কোনো ক্ষতি হবেনা। আর কুসংস্কার বা গুজবের কারনে লোকজন আগ্রহী হয়ে এখানে ভীড় জমাচ্ছে। রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।