সিলেটে রেলওয়ের ২৮৭ শতক ভূমি উদ্ধার
সিলেটে রেলওয়ের ২৮৭ শতক ভূমি উদ্ধার করেছে রেল বিভাগ।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের দীর্ঘ দিনের পুরোন রেলওয়ের শতকোটি টাকার ভূমি উদ্ধার করে শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায়। এসময় দু'টি বুলডোজার দিয়ে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা ভানুগাছ সড়কের অবৈধ স্থাপনা, প্রকল্প, দোকানপাট, বাসা বাড়ি, অফিস গুঁড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার-ঢাকা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুর রহমান মামুন, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (রেল) মইনুদ্দিন আহমেদ, শ্রীমঙ্গল থানার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি সোহেল রানা, জিআরপি শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আলমগীর হোসেন, রেলওয়ের কানুনগো ইকবাল মাহমুদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো শ্রীপদ প্রমুখ এসময় উপস্থিতি ছিলেন।
স্থানীয়, পুলিশ ও রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে প্রভাবশালীদের দখলে ছিল রেলওয়ের শতকোটি টাকার ২৮৭ শতক ভূমি।
উচ্ছেদের আগে ভানুগাছ সড়কের উত্তর-পূর্বের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় আর ওই স্থানের সব মালামাল সরিয়ে দেওয়া হয়। আজকের রেলওয়ের শতকোটি টাকার ভূমি উদ্ধারের আগে কয়েক দফায় উচ্ছেদ অভিযানে চালানো হয়েছিল। কিন্তু কোন না কোন কারণে ওই উচ্ছেদ অভিযান সফল করতে পারিনি প্রভাবশালীদের কাছ থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন রয়েছে শ্রীমঙ্গল স্টেশন এলাকার ভানুগাছ রোডের পূর্বপাশ সংলগ্ন রূপশপুর মৌজায় জেএল নং ৬৭, খতিয়ান নং-৩, এসএ দাগ-১৭৬১’এ ২৮৭ শতক ভূমি।
এই ভূমির জন্য গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাংশের নাম ভাঙ্গিয়ে এক শ্রেণীর দখলদাররা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় ‘কৃষি নার্সারি প্রকল্প’র নামে ১৩৫ শতক ভূমি দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এছাড়া শহরের শতাধিক প্রভাবশালী একই দাগের ১৫২ শতক ভূমি দখলে নিয়ে গড়ে তুলছিলেন শতাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ১৫২ শতক ভূমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা।
আরও জানা যায়, সরকারী রাজস্ব বাড়াতে ১৯৮১ সালে টেন্ডারের মাধ্যমে এসব জমিতে ১৮২টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সে সময় হানিফ ও অপরাপর দখলদারদের করা একটি স্বত্ব মামলার জটিলতায় রেল বিভাগ সেসব প্লটের দখল বুঝিয়ে দিতে পারেনি। দখলদাররা সংশ্লিষ্ট শাখার এক শ্রেণির অসৎ কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে ভুয়া ও জাল দলিল তৈরি করে ভূমি দখলে নিতে একের পর এক মামলা করেন। এরই মধ্যে এসব মামলা উচ্চ আদালত কর্তৃক খারিজ হয়। ফলে উচ্চ আদালতের রেলের পক্ষে রায় থাকা সত্ত্বেও দখল ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল প্রভাবশালীরা।
২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা কৃষি নার্সারি প্রকল্পসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রেল বিভাগ এক অভিযান চালায়। এসময় দখলদাররা মুক্তিযোদ্ধা ব্যানার ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সামনে নিয়ে সেই অভিযানে বাঁধা দেয়। বাঁধার মুখে থুবরে পরে রেল বিভাগ অভিযান স্থগিত করে চলে যায়।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, শ্রীমঙ্গলে রেলের ভূমি উদ্ধার করে রাস্তা প্রশস্থ করা ও বাঁকি ভূমি লিজের আওতায় আনা হবে। অতীতের অনেক ঘটনা আছে, আজকের এই উচ্ছেদের মাধ্যমে আমরা কলঙ্কমুক্ত হতে পারবো। আর শ্রীমঙ্গল ব্রিটিশ আমল থেকেই ঐতিহ্যবাহী একটি শহর। এই উন্নয়ন রেলের জায়গাকেই ঘিরে। ব্রিটিশ আমল থেকে রেল লাইন থেকে ৫’শ ফুট পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা আছে। গত পঞ্চাশ বছর ধরে প্রভাবশালীরা রেলের অনেক ভূমি দখলে নিয়ে রেখেছিল। বর্তমান সরকার সরকারের ভূমিগুলো দখল মুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করার কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে আজকের এই উচ্ছেদ অভিযান। উচ্ছেদকৃত ভূমি রেল লাইন থেকে ৫ শত ফুট পর্যন্ত প্রায় ৫ একর জমি হবে তার মধ্যে প্রায় ৩ শতাধিক দোকানপাট হবে।
তিনি বলেন, আজকে আমরা প্রথম দিনের মতো উচ্ছেদ করেছি। আগামী দুই দিনে আমরা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারবো। বুধবার উচ্ছেদকৃত স্থাপনাগুলো হলো- মুক্তিযোদ্ধা কৃষি নার্সারি প্রকল্প, অভিজাত রেস্টুরেন্ট ‘পাঁচ ভাই’, গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম, ফার্নিচারের দোকান, সেলুন, চা পাতার দোকান, বাসা বাড়ি, ভেরাইটিজ ষ্টোর, ফার্মেসী, হার্ডওয়্যারের দোকান, ওয়ার্কশপ, ট্রান্সপোর্ট অফিসসহ শতাধিক পাকা স্থাপনা।