নতুন আঙ্গিকে সাজতে যাচ্ছে সিলেট আওয়ামী লীগ
প্রায় চৌদ্দ বছর পর নতুন আঙ্গিকে সাজছে সিলেট। নতুন রূপ পেতে যাচ্ছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। রাত পোহালেই সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল।
পুরো সিলেট জুড়ে বড় বড় ফেস্টুন, ব্যানার আর বিল বোর্ডে ছেয়ে আছে নানা রকম শুভেচ্ছা ও কথার ফুল ঝুড়ি। সম্মেলনকে আরও সরব ও ঘণীভূত করতে গাড়িতে মাইক যোগে ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে নগরীতে প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছে প্রার্থীরা। এ যেন এক নতুন রূপের বিয়ের বাদ্যযন্ত্রের আরেক ভিন্ন সুর।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্দেশ্যে প্রার্থীদের অভিমতে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে কেন্দ্র থেকে মনোনীত করবেন, তাকেই সবকিছু ভেদাভেদ ভূলে স্বাগত জানাবেন। থাকবে না ওদের মধ্যে কোন দ্বি-মত। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মতামতের ভিত্তিতে আগামীকালের সম্মেলনে নাম ঘোষণার দায়িত্ব নিতে পারেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এদিকে এবার সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সবচেয়ে তুঙ্গে যাদের নাম উঠেছে তারা হলেন- বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, আসাদ উদ্দিন আহমদ, রাজ উদ্দিন, তপন মিত্র, শফিউল আলম নাদেল, আজাদুর রহমান, ফয়জুল আনোয়ার আলাওর, বিজিত চৌধুরী ও জাকির হোসেন। এদের মধ্যে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, আসাদ উদ্দিন আহমদ ও রাজ উদ্দিন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদের প্রার্থী হিসেবে আর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী হিসেবে আছেন তপন মিত্র, শফিউল আলম নাদেল, আজাদুর রহমান, ফয়জুল আনোয়ার আলাওর, বিজিত চৌধুরী ও জাকির হোসেন। এই উল্লেখযোগ্য নামগুলোর মধ্যে নতুন আরও কয়েকটি নাম যোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এর আগে সিলেটের আওয়ামী লীগের দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে একে ওপরের কাঁদা ছিটে হয়েছে বেশ জুড়ালোভাবেই। যার জন্য আওয়ামী লীগের অনুসারীরা দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলণ করেছে একে অন্যের উপরে অভিযোগ তুলে ধরে। কিন্তু এই অভিযোগগুলো কতটুকু দলের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীরা আমলে নিয়েছেন কিংবা কেন্দ্রীয়ভাবে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা এর কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। সব কিছু দলের অভ্যন্তরের মধ্যে রয়ে গেছে যত ক্ষোভ ও যত দ্বিমত। অবশ্য এই প্রত্যাশীত সম্মেলনের দিনে কোন বড় ধরণের বিপত্তি দলে ভেদ করবে কিনা তা নিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ছোট বড় দলের মধ্যে ভিন্ন সূর বেজে উঠেছে নিত্য দিন মুহুর্তে মুহুর্তে। দলের সভানেত্রীর সব সিদ্ধান্ত সহজেই উদারমনায় বরণ করে নিবেন, না রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব বেজে উঠবে সিলেট আওয়ামী লীগে সম্মেলনে। এমনি আলোচনায় চা-য়ের কাপেও ঝড় উঠেছে সচেতন মহলের মধ্যে।
আগামীকাল সিলেট নগরীর আলীয়া মাদ্রাসার ময়দানে মঞ্চে ঘোষণা করা হবে কাঙ্খিত আওয়ামী লীগের সিলেটের কান্ডারীদের নামগুলো। কে আসছে এবার সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে। নতুন না পুরাতন তা নিয়ে ঘুরপাক করে যাচ্ছে সর্বমহলের নেতাকমীদের মাঝে। তবে দায়িত্ব যার উপরে আসবে তাকে তার সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করতে হবে সিলেট জেলা ও মহানগরীতে। কেননা এবার নেত্রীর মন জয় করতে হলে তার কর্ম দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। নেত্রী দেশ ও জনগণের সেবার জন্য দলকে শক্তিশালী করতে চাই কাজের মধ্য দিয়ে। এ নিয়ে দলে কোন প্রকার আপোস করতে চাননা তিনি।
বর্তমান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। সব প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু ক্ষণ গুনার সময়।
বর্তমান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন কামরান বলেন, আমার কোনো কিছু বলার নাই। তবে নেত্রী যাকেই মনোনীত করবেন তার নেতৃত্বই মেনে নেবো। নেতা নির্বাচনে নেত্রী কখনই ভূল করবেন না। দলকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। পদ পদবী অনেকই প্রত্যাশা করতে পারে, তবে সবাই তো আর এক সাথে পদ পাবে না।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ডিসেম্বর) সকাল ১১টার সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দুইটি কমিটির মধ্যে চারটি পদের জন্য ডজনখানিক নেতাকর্মীরা প্রার্থী হয়ে সম্মেলনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছে।
এর মধ্যে নেতৃত্বে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে- শফিকুর রহমান চৌধুরী, শাহ ফরিদ আহমদ, নাসির উদ্দিন খান, নিজাম উদ্দিন, সুজাত আলী রফিক, ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী, শাহ মোশাহিদ আলী, রণজিৎ সরকার, এড. মফুল আলী, এড. রাজ উদ্দিন আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালিক, ফয়জুল আনোয়ার আলোয়ার, অধ্যাপক জাকির হোসেন, এটিএম হাসান জেবুল ও জগলু চৌধুরী ছাড়াও আরও বেশ কয়েক জনের।
তবে আগামীকালের সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভোট গ্রহণের সম্ভাবনা নেই। সভানেত্রীর সিদ্ধান্তেই আগামীকালের সম্মেলন পূর্ণতা পাবে বলে জানা যায় দলীয় সূত্রে।