শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস প্রযুক্তিগত ত্রুটি, যুক্তরাষ্ট্রে বিমান চলাচল বন্ধ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার ‘হাইব্রিড আক্রমণ’ নিয়ে সতর্কতা জার্মানির ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর সাগরে ডুবে গেল বাংলাদেশ থেকে ফেরা সেই রুশ জাহাজ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 11 December, 2019 23:40

ঢাকায় প্রথমবারের মতো তৈরি হতে যাচ্ছে বিদ্যুতের আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশন

নিচে ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, উপরে হবে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন
ঢাকায় প্রথমবারের মতো তৈরি হতে যাচ্ছে বিদ্যুতের আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশন
আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশন-ছবি সংগৃহিত

স্বপ্না চক্রবর্তী, ঢাকা থেকে:  বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঢাকায় তৈরি হতে যাচ্ছে বিদ্যুতের আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশন। ‘ঢাকা আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশন কন্সট্রাকশন প্রজেক্ট অ্যাট কাওরানবাজার আন্ডার ডিপিডিসি’ নামে এই সাবস্টেশন তৈরি হচ্ছে। ৯শ ৫০ কোটি ৩৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকার প্রকল্পটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। রাজধানীর কাওরানবাজার এলাকায় জাপানী অর্থায়নকারী সংস্থাক জাইকা এই আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশনটি নির্মাণ করবে।

বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এবং জমির দুষ্প্রাপ্যতা বিবেচনায় সরকার আন্ডারগ্রাউন্ড সাবস্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৩২ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড সঞ্চালন লাইন নির্মাণসহ একই জায়গার উপর নির্মিত হবে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। ফলে একই সাথে ৪৪.২ কাঠা জমির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার হবে বলে দাবি করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

জানা যায়, জাইকার নিয়োগকৃত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ঢাকা শহরে আন্ডারগ্রাউন্ড উপকেন্দ্র নির্মানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন তৈরি করে। এই প্রতিবেদনে রাজধানীতে ২ টি আন্ডারগ্রাউন্ড সাব-স্টেশন স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। এ জন্য সম্ভাব্য ৬ টি জায়গার মধ্যে ডেসকোর জন্য গুলশান এবং ডিপিডিসি’র জন্য কাওরানবাজার স্থান দুটি গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ডিপিডিসি এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে। যদিও প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১৮ এর ১ জুলাই থেকে ধরা হয় কিন্তু জমি নির্বাচন নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ধরণের ছাড়পত্র পেতে পেতে কাজ শুরু হতে দেরি হয়ে যায়।

তবে এর মেয়াদকাল ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগেই নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে দাবি করেছেন প্রকল্পের সহকারী পরিচালক ও ডিপিডিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, দাপ্তরিক কাজ শুরু হলেও প্রকল্পের কাঠামোগত কাজ শুরু হবে আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ। তবে দেরীতে শুরু হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্মাণকাজ সম্পন্ন তবে বলে আশা করছি। প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অগ্রগতির বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, এই প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) ২০১৭ সালের জানুয়ারীর ১৯ তারিখে বিদ্যুৎ বিভাগ, ইআরডি, জাইকা, ডেসকো ও ডিপিডিসির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ‘মিনিট অফ ডিসকাশন’ (এমডি) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের জুনের ২৯ তারিখ বাংলাদেশ সরকার এবং জাইকা’র মধ্যে এই প্রকল্পের জন্য ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের জুনের ২১ তারিখে প্রকল্পটির ডিপিপি একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। তিনি জানান, প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো রাজধানীর কাওরানবাজারে ভূ-গর্ভস্থ উপকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করা। এছাড়াও, কাওরানবাজার এলাকায় একটি ১৩২/৩৩ কেভি ও ৩৩/১১ কেভি ভূ-গর্ভস্থ উপকেন্দ্র নির্মাণ করে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো ও ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কারিগরি লস কমানোও আমাদেরও উদ্দেশ্য।

এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নতুন প্রযুক্তির উপকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে নিরাপদ বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং নতুন গ্রাহক সংযোগ সুবিধা তৈরি হবে বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের কর্মপরিধির মধ্যে রয়েছে ১৩২/৩৩ কেভি (১২০ এমভিএ) পাওয়ার ট্রান্সফরমার (জিআইটি) স্থাপন ৩ টি, ৩৩/১১ কেভি (৫০ এমভিএ) পাওয়ার ট্রান্সফরমার (জিআইটি) স্থাপন ৩ টি। ১৩২ কেভি জিআইএস, ৩৩ কেভি জিআইএস এবং ১১ কেভি সুইচগিয়ার স্থাপন। ভূ-গর্ভস্থ উপকেন্দ্র ভবন, কেবল ট্যানেল নির্মাণসহ অন্যান্য পূর্ত কাজ। নির্মাণ হবে ১৩২ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড সঞ্চালন লাইন।

তিনি জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসের ২৫ তারিখ আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জেভি অফ টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার সার্ভিসেস কোম্পানি লিমিটেড (টেপ্সকো) এবং টেপকো পাওয়ার গ্রিড (টেপকো পিজি) এবং ডিপডিসির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বর্তমানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে ডিপিডিসি প্রতিনিধির সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসের মাসিক প্রতিবেদন দাখিল করাসহ ইতোমধ্যে প্রকল্পের ইন্সপেকশন প্রতিবেদন, প্রজেক্ট ডেফিনিশন প্রতিবেদন এবং ড্রাফট বেসিক প্রতিবেদন দাখিল করেছে। শুধু তাই নয় প্রকল্পের নকশা অনুমোদন এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে রাজউকের পরামর্শ গ্রহণের জন্য ডিপিডিসি এবং রাজউকের মধ্যে এ বছরের আগস্ট মাসের ৬ তারিখ রাজউক ভবনে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে রাজউকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

এছাড়া ভূ-গর্ভস্থ উপকেন্দ্রের ফায়ার ফাইটিং সংক্রান্ত বিভিন্ন কারিগরি দিক আলোচনা এবং এ বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাথে ৮ অক্টোবর তারিখে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্প এলাকার সিকিউরিটি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ এবং বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর সাথে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মো. মেহেদী হাসান বলেন, আন্ডারগ্রাউন্ড সাব-স্টেশন ভবনের উপরিভাগে ডিপিডিসি’র নিজস্ব অর্থায়নে অফিস কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ডিজাইন ও সুপারভিশন কাজের জন্য স্থানীয় আর্কিটেকচারাল ফার্ম এর সাথে গত ৩১ মার্চ তারিখে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। স্থানীয় আর্কিটেক্ট প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের ভূ-গর্ভস্থ উপকেন্দ্রের ডিজাইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এর উপরিভাগে সুপারস্ট্রাকচার ডিজাইন প্রণয়নের কাজ করছে। আগামী বছরের জুন-জুলাই থেকে কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। আশা করছি রি-টেন্ডার না হলে মেয়াদের মধ্যেই অর্থাৎ ২০২৩ সালে ৩১ ডিসেম্বরের আগেই এর কাজ শেষ হবে। 

 

উপরে