বছরে নতুন করে ১৩ হাজার শিশু ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছে দেশে
বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩ হাজার নতুন শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া। এই নতুন রোগীদের বেশির ভাগই অর্থের অভাবে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য না হওয়া চিকিৎসা গ্রহণ করে না বা গ্রহণ করতে পারছে না।
কেউ আবার অজ্ঞতার কারণেও চিকিৎসকের কাছে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে আসেন না। এক্ষেত্রে শিশু ক্যান্সার বিষয়ে জনসচেতনতার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ খসরু জানান, ২০১০ সাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে শিশু ক্যান্সার বিভাগ চালুর পর থেকে এ যাবত ১০৫২ রোগি চিকিৎসা গ্রহন করেছে যার মধ্যে ২৩২ জন রোগী সম্পুর্ণ নিরাময় লাভ করে সুস্থ আছে এবং আরো ১৫০ রোগী চিকিৎসার বিভিন্ন ধাপে আছে যারা সামনে চিকিৎসা শেষ করে সুস্থ জীবনে ফিরে যাবে।
৬টি বেড দিয়ে এই বিভাগের শুরু হলেও বর্তমানে বেড সংখ্যা ৩১, যার মধ্যে ৬ টি পেইং বেড। বর্তমানে দুইটি ওয়ার্ডে ২৪ টি বেড, ওয়ার্ড দুইটির রোগীদের স্বার্থে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, এত কিছুর পরও আমাদের নতুন রোগীদের নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই নতুন রোগীদের বেশির ভাগই অর্থের অভাবে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য না হওয়ায় চিকিৎসা গ্রহন করেনা বা গ্রহন করতে পারে না। যেসব শিশু চিকিৎসা গ্রহন করতে আগ্রহী তারাও বাংলাদেশে শিশু ক্যান্সার রোগ নিরাময়ের হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতার জন্য চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হয়। কেউ কেউ কবিরাজি, হোমিওপ্যাথি ইত্যাদি পদ্ধতির চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং নিশিচতভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
তবে বেশিরভাগ অভিভাবকেরই ধারনা ক্যান্সারের কোনো চিকিৎসা নাই, মৃত্যুই এসব শিশুর ভবিতব্য ফলে তারা কার্যকর কিছু করার চেষ্টাও করেনা। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে শিশু ক্যান্সার একটি নিরাময় যোগ্য রোগ যা সঠিক চিকিৎসা পেলে সম্পুর্ণ নিরাময় হয়।
তিনি বলেন, শিশু ক্যান্সারের নিরাময়ের জন্য অর্থ কোনো অন্তরায় না এই বিভাগে প্রায় ৭০ ভাগ ওষুধ পাওয়া যায় যা দিয়ে থাকে সরকার এবং বিভিন্ন দাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বর্তমান পরিচালক জনাব ব্রি. জে. এ কে এম নাসির উদ্দিনও শিশু ক্যান্সার রোগিদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই বিভাগে সর্বাধিক ওষুধ সরবরাহ করেছেন।
তিনি জানান, তাই ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আমরা প্রতিবছরই ১৪ ডিসেম্বর আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করি। এর মধ্যে র্যালি, আলোচনা সভাসহ অন্যান্য সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানও থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার র্যালি হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ। এসময় তিনি সবাইকে শিশু ক্যান্সার নিরাময়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। আরও ছিলেন সিসিম্পুর এর নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক, ডাক্তার, নার্স এবং ক্যান্সারজয়ী শিশু ও তাদের পিতামাতারা। ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যান্সার, সিসিমপুর এবং হেলথকেয়ার ফার্মাসিটিক্যাল এর সহায়তায় র্যাালী এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করে শিশু রক্তরোগ ও ক্যান্সার বিভাগ।
এসব বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জনগনের মাঝে শিশু ক্যান্সার সচেতনতা বাড়ালে জনগন শিশু ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য শিশু ক্যান্সার চিকিতসকের কাছে আসবে এবং শিশুর চিকিৎসার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিবে বলে সবাই মনে করে।