শিরোনাম
ঋণের তৃতীয় কিস্তি ১.১১ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন আইএমএফের ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র টি২০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত ফ্রান্সে পার্লামেন্টারি নির্বাচনের প্রথম ধাপে কট্টর ডানপন্থীদের জয় যেকোনো স্থান থেকে মামলা করা যাবে ভারতে সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড যে গ্রামের বাসিন্দারা প্লেনে চড়েই অফিস-বাজারে যান! টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ইমদাদুল হক মিলন ও মাহবুব ময়ূখ রিশাদ বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার নির্দেশ ৭ দেশের নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 19 January, 2020 03:43

ফেসবুকে ভিডিও দেখে ৪৮ বছর পর বাবাকে খুঁজে পেলেন সন্তানরা

ফেসবুকে ভিডিও দেখে ৪৮ বছর পর বাবাকে খুঁজে পেলেন সন্তানরা
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, সিলেট :

অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তবতা।দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে  নিখোঁজ পিতাকে ফিরিয়ে দিল সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক। 

১৯৭২ সালে মো. হাবিবুর রহমান পরিবারকে রেখে ব্যবসায়িক কাজে  চট্রগামের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। তিনি আর বাড়িতে ফিরেননি। স্বজনরা অনেকবার অনুসন্ধানও করেছিল বিভিন্ন মাধ্যমে। কিন্তু তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে  ধারণকৃত এক ভিডিও চিত্রই ফিরিয়ে দিলো হারিয়ে যাওয়া পিতাকে। 

সামাজিক মাধ্যমে ফেসবুকে ধারণকৃত ভিডিও চিত্রটিতে  ছিলো সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে হারিয়ে যাওয়া পিতা মো. হাবিবুর রহমান (৭৮) অসুস্থ্য হয়ে চিকিৎসাধীনে আছেন। আর তার জীবনের ঘটে যাওয়া দিনগুলো তুলে ধরে ভিডিওটি ধারণ করেছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। এমনি ধারণকৃত ভিডিও চিত্রটি দেখে নিশ্চিত হয়ে মো. হাবিবুর রহমানের সন্তান ও স্বজনরা শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) ছুটে আসে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হারিয়ে যাওয়া পিতার খোঁজে। মুহুর্তে হাসপাতালের চারিপাশ আনন্দে আবেগে আত্মহারা হয়ে পড়েন আপনজনেরা। পরে হাবিবুরকে সিলেট ওসমানী হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করে নগরীর বেসরকারি আল- হারামাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

হাসপাতাল ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মো. হাবিবুর রহমান সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের  বেজগ্রামের বাসিন্দা। পেশায়  ছিলেন রড সিমেন্টের ব্যবসায়ী। ১৯৭২ সালে তিনি বাড়ি থেকে ব্যবসায়িক কাজে বের হয়েছিলেন স্ত্রীসহ চার পুত্র সন্তানদের রেখে চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে। এরপর তিনি আর বাড়িতে ফিরেনি। 

প্রায় ২৫ বছর ধরে মৌলভীবাজারের শাহাবুদ্দিন মাজার এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন মো. হাবিবুর রহমান। তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন। আর ওই মাজারে রাজিয়া বেগম (৫০) নামের এক মহিলা বার বছর ধরে দেখাশোনা করে যাচ্ছেন হাবিবুর রহমানের। বাইশ দিন আগে হঠাৎ প্রবীণ হাবিবুর রহমানের হাত ভেঙে যায়। এজন্য তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করান রাজিয়া। অবস্থার উন্নতি না দেখে পরে তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করান রাজিয়া বেগম। সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করার পর  এর পাশের বেডের রোগী স্বজনদের হাবিবুর রহমানের ঘটে যাওয়া জীবন কাহিনীর গল্পগুলো বলতে থাকেন রাজিয়া।ঐ সময় ওই ব্যক্তি হাবিবুর রহমানের একটি ভিডিও চিত্র ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করেন। আর ওই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হতে থাকে। 

ফেসবুকে দেওয়া ভিডিও এর চিত্র গল্প দেখে আমেরিকা থেকে বিয়ানীবাজারের এক ব্যক্তি ওই ভিডিও হাবিবুর রহমানের বড় ছেলের বৌমাকে বৃহস্পতিবার পাঠান। এরপর বৌমা ভিডিওটি পরিবারের সদস্যদের দেখান। ভিডিওটি পরিবারের সদস্যরা অনুমান করতে পেরে সাথে সাথে তার দুই সন্তান শাহাব উদ্দিন ও জালাল উদ্দিন শুক্রবার রাতে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন বাবার খোঁজে। পরে তারা বাবার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

এই সময় হাসপাতালের ৬১২ নম্বর কক্ষের সবাই আনন্দে কাঁদতে থাকে।কথা বলার সময় হাবিবুর রহমান নিজের স্ত্রী, ভাইদের নামসহ বাড়ীর ঠিকানা বলতে পারেন। 

পরে হাবিবুর রহমানকে সিলেট নগরীর আল-হারামাইন হাসপাতালে ভর্তি করান স্বজনরা। পাশাপাশি রাজিয়া বেগমেরও সেবাযত্ন নেন তারা। 

এ বিষয়ে পাশে থাকা রাজিয়া বেগম বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে এক মাজারে হাবিবুর রহমানের সাথে দেখা হয়। সেই সুবাধে তিনি আমাদের পরিচিত হয়ে উঠেন। আমিও তাকে সম্মান করে পীর সাহেব বলি ডাকি। এরপর থেকেই আমি তার দেখাশুনা করে আসছি। কিছুদিন আগে পীর সাহেবের হাত ভেঙে যাওয়ায় সুচিকিৎসা নিতে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করার হয়। সেই থেকে অনেকের সাথে আমার আলাপচারিতা হলে সুভাগ্যবসত পীর সাহেব তার হারানো পরিবারকে ফিরে পায়। 

এদিকে পিতাকে ফিরে পেয়ে পুত্র জালাল উদ্দিন জানান, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীতে আমার বাবা ব্যবসার উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যান। এরপর আমাদের পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি। এর মধ্যে ২০০০ সালে আমার আম্মা মারা যান। বাবা যখন হারিয়ে যান তখন আমরা সিলেট জেলা বিয়ানীবাজারের বেজগ্রামে বসবাস করছিলাম। আর এখন বিয়ানীবাজার পৌরসভার কবসা এলাকায় বসবাস করছি। 

হারিয়ে যাওয়া পিতাকে পেয়ে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে পুত্র আরও বলেন, এটা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। কারণ দীর্ঘ ৪৮ বছর পরে আমরা আমাদের বাবাকে পেয়েছি।আমার সন্তানরা পেয়েছে তাদের দাদাকে। তাই পরিবারের সবাই খুব খুশি।

উপরে