বিশ্বজুড়ে বাড়ছে আক্রান্ত-মৃত্যু
বিশ্বের ১৮৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ১৮ হাজার ৫০৫ জন। করোনায় ইতালির পরে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে বাসিন্দাদের চলাফেরায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। দেশে দেশে একের পর এক শহর লকডাউন করে দেয়া হচ্ছে। সতর্কতার অংশ হিসেবে এর আগে বিভিন্ন দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বাস, রেল ও বিমানসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও জরুরি অবস্থা ও কারফিউ জারি করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারস ডট ইনফো’র হিসাব অনুযায়ী- বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় মোট ১৩ হাজার ৬৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ১৮ হাজার ৫০৫। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছে ৯৬ হাজার ০১১ জন। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের (এনএইচসি) তথ্য অনুযায়ী শনিবার চীনে আরও ছয়জন মারা গেছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ২৬১ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৫৪ জন। এর মধ্যে মোট ৭২ হাজার ৪৪০ জন রোগী সুস্থ হয়েছে। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা ইতালিতে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৫৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। শুক্রবার একদিনই রেকর্ড ৭৯৩ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৮২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ ঘণ্টায় ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৪ জনে। ২৬ হাজার ৭৭৯ জন আক্রান্ত হয়েছে।
স্পেনের পরিস্থিতি ভয়াবহ : স্পেনে রোববার মৃত্যুর পাশাপাশি বেড়েছে নতুন রোগীও। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৩২৪ জনের মৃত্যু হয়। দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭২০ জনে। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ৫৭২ জন। সেখানে শনিবার ছিল ২৪ হাজার ৯২৬ জন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে দুই হাজার ৫৭৫ জন সুস্থ হয়েছে। এখনও হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন এক হাজার ৭৮৫ জন। করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। শনিবার দেশবাসীকে সতর্ক করে তিনি বলেন, সবচেয়ে খারাপ সময় আসতে বাকি। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ১৪ মার্চ স্পেন সরকার সারা দেশে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করে। তা আরও ১৫ দিন বাড়ানোর ভাবনা চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চারজনের একজন ‘ঘরবন্দি’ : মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের নেয়া পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চার বাসিন্দার একজন ‘ঘরবন্দি’ থাকার নির্দেশনার আওতায় পড়েছে। হু হু করে বাড়তে থাকে ভাইরাসের সংক্রমণ। কমিয়ে আনতে ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, ইলিনয় ও কানেকটিকাটের পর নিউ জার্সির গভর্নরও অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের চলাফেরায় ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন।
বুর্কিনা ফাসোর চার মন্ত্রী একসঙ্গে আক্রান্ত : আফ্রিকার দেশ বুর্কিনা ফাসোর মন্ত্রিসভার চার সদস্য একসঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৪ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। খনিজসম্পদমন্ত্রী ওমারোউ ইদানি, ?শিক্ষামন্ত্রী স্ট্যানলিম ওউরাউ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিমিওন সোয়াদোগো ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়েছেন। এর আগে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর জানান। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪ জন। ১১ মার্চ দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠকে সব মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি।
কলম্বিয়ায় প্রথম মৃত্যু : কলম্বিয়ায় করোনায় প্রথম একজন মারা গেছে। শনিবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফার্নান্দো রুইজ জানান, মারা যাওয়া ব্যক্তি কার্তাজিন শহরের বাসিন্দা ও পেশায় ট্যাক্সিচালক (৫৮)। কয়েকদিনে তিনি দুজন বিদেশিকে আনা-নেয়া করেছিলেন। করোনায় দেশটিতে ২১০ জন আক্রান্ত হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার থেকে কলম্বিয়ানরা তিন সপ্তাহের জন্য বাধ্যতামূলক আইসোলেশনে যাচ্ছে।
গাজা উপত্যকায় দুইজন শনাক্ত : গাজা উপত্যকায় দুই করোনা রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। রোববার আক্রান্ত হওয়া দুই ব্যক্তি বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বৃহস্পতিবার পাকিস্তান থেকে ফেরার পর ওই দুই ব্যক্তির করোনা পরীক্ষা করা হয়। রোগী দুইজন পুরুষ এবং তাদের বয়স যথাক্রমে ৩০ ও ৪০ বছর। বর্তমানে তাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
নিয়ন্ত্রিত জীবনেও ঝুঁকিতে শিশুরা- ইউনিসেফ : বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের কারণে ঘরবন্দি হয়ে পড়া শিশুদের নানাভাবে নিগৃহীত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও সতর্ক করেছে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক জরুরি শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। রোববার এক বিবৃতিতে ইউনিসেফ বলেছে, করোনার বিস্তার রোধে নেয়া নানা ধরনের পদক্ষেপের কারণে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ শিশু দুর্ব্যবহার, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, শোষণ, সামাজিক বাধার মুখোমুখি হতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া ও চলাচলের সীমাবদ্ধতার মতো নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে শিশুদের দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে যারা তাদের দেখভাল করে তাদের ওপরও এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করছে। এর প্রভাবে তারা দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারে বলেও মনে করছে ইউনিসেফ। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সম্প্রতি চীনে নারী ও মেয়েদের ওপর ঘরোয়া সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার উদাহরণ টেনে বিবৃতিতে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন ও বাল্যবিয়ের মতো ঘটনাও বাড়তে পারে। এমন আর্থ-সামাজিক বিপর্যয়ের মধ্যে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইউনিসেফ সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বেশকিছু সুপারিশও করেছে।